ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চলনবিলে নির্বিচারে শামুক নিধন

জীববৈচিত্র্য হুমকিতে
চলনবিলে নির্বিচারে শামুক নিধন

চলনবিলে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির শামুক পাওয়া যাচ্ছে। কর্মহীন কৃষক ও জেলেরা সেই শামুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এসব শামুক হাঁস ও মাছের খাদ্য হিসেবে কিনছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে রয়েছে। চলনবিল অধ্যুষিত বড়াইগ্রামের চামটা ব্রিজ এলাকা ও গুরুদাসপুরের বিলশাসহ কয়েকটি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে চলছে শামুক কেনাবেচা।

জানা গেছে, বর্ষায় চলনবিলকেন্দ্রিক চামটা, রুহাই, বিলশা, চর বিলশা, পিপলা, বামনবাড়িয়া, হরদমার কর্মহীন মানুষ বাড়তি আয়ের আশায় শামুক সংগ্রহ করছেন। এরপর সেগুলো বস্তাবন্দি অবস্থায় ভোরে বিক্রির জন্য চর-বিলশায় আনা হয়। শুধু বিলশা পয়েন্টেই দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার টাকার শামুক কেনাবেচা হচ্ছে। বিলপাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিলের বিভিন্ন অংশ থেকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় এক প্রকার বিশেষ জাল টেনে শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। একজন দৈনিক তিন থেকে চার বস্তা শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। মাঝারি আকৃতির এক বস্তা শামুক বিক্রি হয় ১৫০-১৭০ টাকায়। এ হিসাবে শামুক সংগ্রহ করে একজন শ্রমিক দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করছেন।

চামটা এলাকার শামুক সংগ্রহকারী বোরহান উদ্দিন জানান, বর্ষা মৌসুমে বিলে মাছ ধরে চলে তাদের সংসার। কিন্তু বর্ষার পানি শুকানোর আগ মুহূর্তে তাদের হাতে কাজ থাকে না। এ সময় শামুক বেচেই তার মতো অনেকের সংসার চলে। চর-বালশার শামুক ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, বিলশা পয়েন্টে আরো দুই জন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিবস্তা ১৭০ টাকায় কিনে তা ১৮০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করে থাকেন। সেগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ছোট আকৃতির ৫/৬ ট্রাক শামুক বেচা কেনা হয়। তিন মাস চলে শামুক কেনাবেচা। পাশর্^বর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নাদো-সৈয়দপুরের শামুক ক্রেতা সিদ্দিক জানান, তার একটি হাঁসের খামার রয়েছে। ৫০০ হাঁসের জন্য দৈনিক ১০ বস্তা শামুক তিনি বিলশা থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতি বস্তা শামুক কেনেন ১৮০ টাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুক পানিতে থাকা ক্ষুদ্র জীব খেয়ে জলাশয়কে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মাটির উর্বরতা বজায় রাখে। যা চলনবিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় খুবই প্রয়োজন। কিন্তু নির্বিচারে আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। ফলে চলনবিলের পানি দূষিত হবে ও মাছের উৎপাদন কমে যাবে। পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও প্রভাবিত হবে। উপজেলা জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী গাজী জানান, শামুককে জলজপ্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এ আইন অমান্য করে নিধন চলছে। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেলসহ অর্থদণ্ডের বিধান থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় থামছে না শামুক নিধন। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুণ জানান, শামুক-ঝিনুক প্রাকৃতির ফিল্টার। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এসব শামুক-ঝিনুক পচে গিয়ে জমির উবর্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নির্বিচারে কৃষকের বন্ধু শামুক ও জলজ উদ্ভিদ নিধন হলে মাটির ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত