ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কুমিল্লায় অর্ধশতাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল

* দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে ১১ কোটি টাকা জরিমানা
কুমিল্লায় অর্ধশতাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল

কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় রাস্তা ও ব্রিজের নির্মাণ-সংস্কার কাজ বন্ধ রাখায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কুমিল্লার অধীন অর্ধশতাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে আট কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও দেরিতে কাজ সম্পন্ন করায় দেড় শতাধিক ঠিকাদারকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিলম্বজনিত জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অবহেলা ও অসমাপ্ত কাজের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলজিইডি কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এলজিইডি সূত্র আরও জানায়, জেলার ১৭টি উপজেলায় সংস্থাটির অধীন ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়ক নির্মাণসহ সংস্কারের জন্য গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজের চুক্তি সম্পাদন করার পরও অদ্যবধি চুক্তি অনুযায়ী কাজ শুরুই করেনি। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও সামান্য কাজের পর ফেলে রেখেছেন। কেউবা চুক্তি অনুযায়ী সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় নানা অজুহাতে একাধিকবার সময় নিয়েও কাজের সিঁকিভাগও করেনি। গ্রামীণ পর্যায়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শুরু কিংবা সময়মত সম্পন্ন না হওয়ায় ও কাজ ঝুলে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। এ অবস্থায় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু না করায় এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল করেছে এবং দেরিতে কাজ সম্পন্ন করায় দেড় শতাধিক ঠিকাদারকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করেছে। এদিকে, প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির চারটি বড় প্রকল্পে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। একাধিকবার সময় বাড়িয়ে নিয়েও কাজ শেষ করা হয়নি। কোনোটির চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা ও চরম গাফিলতির কারণে বছরের পর বছর ঝুলে আছে এসব কাজ। একাধিক সূত্র জানায়, সরকার বদলের পর কিছু প্রকল্প কাজের ঠিকাদার আত্মগোপনে থেকে কাজ হাতবদল করায় কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এলজিইডি সূত্র জানায়, ৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৩১ হাজার ৪০২ টাকা ব্যয়ে জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বাতাকান্দি-কদমতলী থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত ৫৭০ মি. গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় বাসী লি: ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাজটি শুরু করে ২০২৩ সালের ১৮ মে তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পর প্রায় সাড়ে ৫ বছর অতিবাহিত হলেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। এখনো ওই ব্রিজের একটি পিয়ারের পাইলের কাজও শুরু করা হয়নি।

এছাড়া, ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার ৪৩৪ টাকা ব্যয়ে জেলার বুড়িচং উপজেলার চড়ানল-নগরপাড় রাস্তায় ২৭ মি. দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় ভোলার মো. ইকবাল হোসেন-মেসার্স শশী এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। ওই ব্রিজের ২২টি পাইলের মধ্যে ১১টি পাইলের করাজ করা হয়। এ কাজের ল্যাবরেটরিতে লোড টেস্ট রিপোর্টে গুণগত মান সঠিক না হওয়ায় তাদের বিল আটকে দেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৯টি প্যাকেজে ৬৭.০৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৫৮টি নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্য ঢাকার ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে সবগুলো কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরই মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ৩টি রাস্তার কাজ এখনো শুরু করা হয়নি, চারটি রাস্তার কাজ এগিয়েছে সিঁকি ভাগ এবং ১১টি রাস্তার গড় অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এছাড়া ১ কোটি ১৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৩০ টাকা ব্যয়ে মুরাদনগর উপজেলার মালিপাড়া-পূর্বধইর সড়ক ভায়া নবীয়াবাদ মাদ্রাসা সড়ক কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ পায় কুমিল্লার মেসার্স এমএম কন্সট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৬ আগস্ট কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শুরু না করায় গত ৫ অক্টোবর চুক্তিটি বাতিল করে ১০ পার্সেন্ট টাকা জরিমানা করা হয়।

এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ সময়ের এক থেকে ৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও কাজ শুরু করেনি। এছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজের সিঁকিভাগও সম্পন্ন করেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান অঙ্গীকারনামা দিয়ে সময় বৃদ্ধি করে নেয়ার পরও কাজ আটকে রেখেছেন এবং আবারও সময় বৃদ্ধির জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। আবার কেউ কেউ অত্যন্ত নিম্নমানের কাজের কারণে নির্মিত ব্রিজ ও রাস্তার কাজ ভেঙে অপসারণ করা হয়েছে। এভাবে প্রভাব খাটিয়ে অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ আটকে রাখার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কিছু ঠিকাদার অসন্তুষ্ট হলেও বেশিরভাগ ঠিকাদার কাজের গতি বাড়িয়ে দ্রুত কাজ শেষ করছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত