ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কা এখনও কাটেনি

বললেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কা এখনও কাটেনি

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমার কাছে এমন কোনো জরিপ নেই যা বলে নির্বাচন হবে না। বরং নির্বাচন এখন অবধারিত। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কা এখনও কাটেনি। এটি নিশ্চিত করা না গেলে রাজনৈতিক পরিবর্তন দেশ ও জনগণের জন্য কোনো সুফল বয়ে নিয়ে আসবে না। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো এই শঙ্কা দূর করে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের এক রেস্তোরাঁয় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে; এ বিষয়টি সবাই মেনে নিলেও নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে এখনও শঙ্কা কাটেনি। তবে নির্বাচন যে হবে এমনটা সবাই মানছেন। কিন্তু সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কি না, সেই উদ্বেগ এখনও দূর হয়নি। প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, তিনি ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেবেন- আমরা তারই অপেক্ষায় আছি। সরকারের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে জনগণের হতাশার কথাও উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদের হিসাব প্রতি তিন বা ছয় মাস অন্তর প্রকাশের দাবি উঠেছে। আগের সরকার যেমন তা পূরণ করতে পারেনি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও করেনি। দেবপ্রিয় আরও বলেন, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম দুটি উদ্যোগ নিচ্ছে- একটি ডিজিটাল ‘রিফর্ম ওয়াচ’ প্ল্যাটফর্ম, যা ১৪ তারিখ উদ্বোধন হবে এবং ২০ তারিখ রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে নাগরিক প্রত্যাশা ভিত্তিক নির্বাচনী ইশতেহার প্রদান।

তার ভাষায়, বাংলাদেশ এখন এক ধরনের দোলাচলে আছে। একদিকে অসীম পরিবর্তনের সম্ভাবনা, অন্যদিকে অর্জিত অগ্রগতির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা রাজনৈতিক দল কেউই এসব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেনি জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত এক বছরের অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝিয়েছে- কিছু না করে আর পার পাওয়া যাবে না। বড় ধরনের অন্যায় বা দুঃশাসন করলে দেশে অবস্থান করাই কঠিন হয়ে পড়বে এই উপলব্ধি তৈরি হয়েছে। এটি টেকসই হবে কি না- সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সুশাসন, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও নিরাপত্তার দাবি জোরালোভাবে এসেছে। তার ভাষায়, রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিমুক্ত থাকা এবং জবাবদিহিতার দাবিই আজকে সবচেয়ে বড় আকারে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে, সব বিষয়ে সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নাগরিকদের শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা দেখেছেন- সবাই দক্ষ প্রশাসন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং নিরপেক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চান। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে এসব বিষয়ে কীভাবে গুরুত্ব দেবে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘোষিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ফলে ভবিষ্যৎ সরকারও একই পথ অনুসরণ করতে পারে- এ আশঙ্কা অনেকের মধ্যে রয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেড় বছর ধরে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চললেও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। সভার আগে অংশগ্রহণকারী নাগরিকেরা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তারা সুশাসন, জবাবদিহিতা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, নিরপেক্ষতা, বৈষম্য হ্রাস, কর্মসংস্থান, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবেন।

এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলা সভায় বিভিন্ন পেশার মানুষ- রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও সামাজিক কর্মীরা অংশ নেন। এই সভায় বিভিন্ন পেশার মানুষ বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান, সুজনের সাবেক আহ্বায়ক প্রফেসর সিকান্দার খান, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত