
বাবা ছিলেন জেলে, অভাবের সংসারে পড়াশোনায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবা মারা যান। চোখে অন্ধকার , চেহারায় হতাশা, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে স্থানীয় এক মুরব্বি থেকে ১৫শ’ টাকা ধার নিয়ে শুরু করেন ডিমের ব্যবসা। গ্রাম থেকে ডিম কিনে বাজারে বিক্রি করেন। ডিমের ব্যবসা ভাল না হওয়ায় কিছু দিন পর শুরু করেন নতুন ব্যবসা, সাইকেলে ফেরি করে করেন মুরগি বিক্রি। পাশাপাশি তৈরি করেন মুরগির খামার। খামারের মুরগি থেকে ডিম উৎপাদন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর মাদ্রাজ গ্রামের আবদুর রশিদ এখন বিরাট সফল ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা। মৎস্য ও গোখাদ্যের ব্যবসাসহ রয়েছে তার একাধিক মৎস্য-মুরগি ও গরুর খামার। তার এসব খামার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করে প্রায় আট থেকে দশজন যুবকের হয়েছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
আবদুর রশিদ জানান, ২০০১ সালে প্রথম ডিমের ব্যবসা শুরু করেন। ডিমের ব্যবসা ভাল না হওয়ায় দুই বছর পর শুরু করেন মুরগির ফড়িয়া ব্যবসা, সঙ্গে করেন কৃষি ফসল উৎপাদন। ২০০৪ সালে বৈরি আবহাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ঋণের ৬ লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যান। ঋণদাতাদের অনুরোধ এলাকায় ফিরে এসে ফের শুরু করেন রশিদ মুরগির ফড়িয়া ব্যবসা।
এ ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে তোলেন মুরগির খামার। খামারেই উৎপাদন করেন ডিম। ডিম বিক্রিতেই রশিদ দেখতে পান লাভের মুখ। একটি নয় দুইটি নয় এখন রয়েছে তার তিনটি মুরগির ডিম উৎপাদনের খামার। এসব খামারে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ডিম দেওয়া মুরগি। প্রতিদিন গড়ে তার খামারে ন্যূনতম ৮ হাজার ডিম উৎপাদন হয়। এ ডিম বিক্রি করে প্রতিমাসে খরচ বাদে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। তবে রশিদ জানান, বছরে ৩ মাস অক্টোবর, নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ডিমের দাম কম থাকায় এ সময় লাভ কিছুটা কম হয়। এছাড়াও তার দুটি মৎস্য খামার ও একটি গবাদিপশুর খামার রয়েছে। সেখান থেকেও তার আয় আসে। জানা গেছে, খামার ছাড়াও চরফ্যাশন সদরে বিসমিল্লাহ সোনালী বিতান নামে ফিডের দুটি যৌথ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রশিদ এখন কোটি টাকার ওপরে মালিক। আবদুর রশিদ বলেন, তাকে এ পর্যায়ে আসতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। দিনরাত শ্রম দিতে হয়েছে। মুরগীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে খাবার এবং ঔষধ প্রয়োগে যথেষ্ট যত্নশীল থাকতে হয়। কিন্তু সরকার বা স্থানীয় উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কোন সহযোগিতা নেননি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন সহযোগিতা চাননি।আবদুর রশিদের মুরগির খামারে চাকরি করা ফারুক মিয়া বলেন, আগে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। সেসময় প্রতিদিন কাজ থাকতো না। অভাবে সংসার চলতো। প্রায় ৩ বছর ধরে তার খামারে নিয়মিত মাসিক বেতনে কাজ করি। মাসে ১৮ হাজার টাকা পাই। ওই টাকায় আমার সংসার ভালোভাবেই চলছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রাজন আলী বলেন, চরফ্যাশন উপজেলায় এমন একজন সফল খামারির জন্য আমরা আনন্দিত। যিনি লেয়ার মুরগির খামার করে মাসে লাখ টাকা আয় করছেন। যা অন্য বেকারদের খামার করতে উৎসাহিত করবে। আমাদের দপ্তর থেকে তাকে সব সময় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।