
মেঘনার অথৈয় জলরাশির বয়ে চলার শব্দ আর জেলেদের কোলাহল। কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে মেঘনার দুই পাড়ের বাসিন্দাদের। এমন চিত্র দেখা মেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার এলাকায়। এখানে গড়ে উঠেছে মিঠাপানির ছোট মাছের বাজার। বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাট হিসেবে পরিচিত মেঘনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এ বাজার। যা ছোট মাছের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন ভোররাত থেকে শুরু হয়, যা শেষ হয় সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে। এ মাছের বাজারে সারা বছরই থাকে ক্রেতা বিক্রেতাদের ভিড়।
বৈদ্যেরবাজার ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা এ বাজারে ভোররাতেই আনাগোনা শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকার মহাজনরাসহ খুচরা ক্রেতারা এখানে আসে তাদের পছন্দের মাছ কিনতে। নৌকা ও ছোট-বড় ট্রলারে করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। এসব মাছের ডাকে (নিলাম) ওঠাচ্ছেন পাইকাররা। মাছ কিনে পাইকাররা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে পাওয়া যায় মেঘনা নদীর সুস্বাদু সব মাছ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টেংরা, পাবদা, মেনি, বাইলা, চিংড়ি, বাইম, পোয়া, কাজলি, কাচকি, মলা, বজরি, বইছা, পুঁটি, কই, শিং, টেকচাঁদা। এসব ছোট মাছের পাশাপাশি রুই, কাতলা, আইড়, বাঘা আইড়, ইলিশ, বোয়াল, চিতলসহ বড় মাছও বিক্রি হয়।
ঢাকার রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে আসা মাহবুবুল আলম ও সাজ্জাদ মিয়া বলেন, আমরা প্রতি মাসে এ ঘাটে মাছ কিনতে আসি। এখানকার মাছ তরতাজা ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পছন্দের তালিকায় সব সময় শীর্ষে থাকে এলাকার ছোট মাছ। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মারুফ হাসান ও তার বন্ধু আকবর আলী বলেন, প্রতি সপ্তাহে তারা এ বৈদ্যেরবাজার থেকে মাছ কেনেন। এসব মাছ তারা তাদের স্বজনদের বাসায় পাঠান ও নিজেরাও খান। তারা বলেন, এ এলাকার মাছ বেশ স্বাদ। তাই মাছ কিনতে লোকজন এ বাজারে ভীড় করেন। আগে মাছের দাম কম ছিল, এখন মাছের দামও একটু চড়া। দালালও ভড়ে গেছেন। মাছ কিনতে দালালদের মাধ্যমে কিনতে হয়।
ঢাকার ডেমরা থেকে আসার মাছের আড়তের পাইকারি মাছ বিক্রেতা জসিমউদ্দিন বলেন, মেঘনার তরতাজা ছোট মাছের কদর অনেক বেশি। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ভোজনরসিক মানুষ আগে থেকেই এসব মাছের অর্ডার দেন। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাদের চাহিদা মতো বাসায় বাসায় আমরা এসব মাছ পৌঁছে দিই। এই মাছের স্বাদ যারা একবার নিয়েছেন, তারা ভুলতে পারেন না। এ জন্য অনেকে অগ্রিম অর্ডার করেন।
বৈদ্যেরবাজার ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উজ্জল বলেন, এই ঘাটে কুমিল্লার মেঘনা থানার বিভিন্ন এলাকা ও আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক এলাকার জেলেরা মাছ বিক্রি করতে আসেন। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৫-২০ লাখ টাকার শুধু ছোট মাছ বিক্রি হয়।
এ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুবল বর্মন, মনির হোসেন, শিবু বর্মন, বকুল বর্মন, নিমল বর্মন ও জীবন বর্মন বলেন, মেঘনা নদীর তাজা ছোট মাছের কদর এখানে অনেক বেশি। তাই ক্রেতাও অনেক বেশি। এখানে ক্রেতারা এসে তাদের পছন্দের মাছ কিনে নিয়ে যায়। তারা এসে মাছের ডাক (নিলাম) এর মাধ্যমে কিনে নেয় অনেকেই। ছোট মাছের পাশাপাশি এ বাজারে বড় মাছও বিক্রি হয়। বড় মাছের ক্রেতা রয়েছে। তারা আরো বলেন, এখন এ মৌসুমে বাজারে মাছ আসে কম। জেলেদের কাছ থেকে কিনতে হয় একটু দামে। তাই অনেক সময় মাছের দাম একটু বেশি থাকে।
সোনারগাঁ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আকতার বলেন, এ ঘাটের মাছের খ্যাতি এখন ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখানকার ছোট মাছ নিয়ে আমরা এখন গর্ব করতে পারি। এ মেঘনা নদীর ছোট মাছগুলো সুস্বাদু। এখানকার জেলেদের সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।