ঢাকা বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্মাণের দুই বছর পরও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু হয়নি

নির্মাণের দুই বছর পরও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু হয়নি

ফেনীতে সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি নির্মাণের দুই বছর পার হলেও এখনও চালু করা হচ্ছে না। এতে করে এক দিকে শহরের মানুষ সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের মূল্যবান বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দিন দিন নষ্ট হয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ফেনী পৌরসভায় চলমান পানি সরবরাহ প্রকল্পের পানির গুণাগুণ ভালো না থাকায় দুই সহস্রাধিক সেবাগ্রহিতার মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে পৌরসভা বলছে, নতুন প্রকল্পটি দ্রুত চালুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

জানা যায়, ৩৬ জেলা শহরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ফেনী পৌরসভার হাসপাতাল মোড়সংলগ্ন বিরিঞ্চি এলাকায় স্থাপন করা হয় বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প। দরপত্র আহ্বানের পর ২০১৯ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের এ কাজটি ২ বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় শামীম ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই লাখ ঘনমিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ প্রকল্পে ৯টি গভীর নলকূপ ও ৪০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন স্থাপন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। করোনাকালীন সময়ে কাজের গতি কমে যাওয়ায় কালক্ষেপণ করে ২০২৩ সালে প্রকল্পটি নির্মাণকাজ শেষ করে ফেনী পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করে ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অযত্মে অবহেলায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি অচল পড়ে আছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, সীমানা প্রাচীর ঘেরা প্রকল্প এলাকার প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো রয়েছে। প্রকল্পটি নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শেষ হলেও ২০২০ সালে এটি উদ্বোধন হয়েছে মর্মে স্থাপন করা একটি ফলক দেখা গেছে। ভেতরের বিভিন্ন লোহার সরঞ্জামাদি জং ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ইলেক্ট্রিকের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এ প্রকল্পটি কেন বা কি কারণে স্থাপন করা হয়েছে; বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না স্থানীয়রা। 

ফেনী পৌরসভার একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে ৪০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। পরে ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে আরও ৪০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফেনী পৌরসভা থেকে আরিফ নামের এক ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর ওই ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফেনী পৌরসভার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রকল্পটি থমকে দাঁড়ায়। পানি শোধনাগারের প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত পাম্প অপারেটর সৌরভকে পৌরসভার অন্য বিভাগে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। 

ফেনী পৌরসভার একাধিক বাসিন্দা জানান, বর্তমানে ফেনী পৌর এলাকায় ৩টি পানির ট্যাংকের মাধ্যমে নাগরিকদের সুপেয় পানি সরবরাহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুরাতন ওই প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৬০০ গ্রাহক প্রতি গ্যালন পানি (১০০০ লিটার) আবাসিকে ৯ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২২ টাকা হারে বিল পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু এ প্রকল্পের পানির মাঝে ময়লা-আবর্জনা থাকায় দিন দিন গ্রাহকরা পৌরসভা থেকে পানির সুবিধা নেওয়া বন্ধ করতে শুরু করেছে। পৌরসভা থেকে চাহিদামত সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে আইনভঙ্গ করে বাড়ির মালিকরা বাধ্য হয়ে পৌর এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সংকট ঘুছিয়ে যাচ্ছেন। 

মো. বেলাল হোসেন নামের এক পৌর নাগরিক ক্ষোভের সাথে জানান, ফেনী পৌরসভায় পুরাতন পানির ট্রাংকিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব ট্রাংকি থেকে সরবরাহকৃত পানির গুণগতমান না থাকায় বাধ্য হয়ে মানুষ শহরে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি তুলছে। নতুনভাবে স্থাপিত প্রকল্পটি চালু করা গেলে এ শহরের অন্তত দুই লাখ মানুষ বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি ব্যবহারের সুযোগ পেত। এতে করে একদিকে পৌর নাগরিকদের উপকার হতো অন্যদিকে পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়ত।

পৌরসভার আরেক বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, পৌরসভার পানি দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছি। গত তিন মাস ধরে পানিতে ব্যাপক ময়লা দেখা যায় এবং মাঝে মাঝে পানির সঙ্গে জোঁকও দেখতে পায়। পানিও তেমন আসে না। এসব সমস্যা সমাধান দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মাসিক বিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পানি মিটারে যতটুকু ব্যবহার হয় ততটুকু বিল হয়। এতে পার গ্যালন  অর্থাৎ (১ হাজার লিটার) পরিমাণ ৯ টাকা আসে। 

ফেনী পৌরসভার প্রশাসক জানান, ২০২৪ এর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানি শোধনাগারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা এটি দ্রুত চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ শেষে আমরা শিগগিরই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু করতে পারব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত