ঢাকা বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গড়াই নদীর পেটে যাচ্ছে ফসলি জমি-ভিটেবাড়ি

গড়াই নদীর পেটে যাচ্ছে ফসলি জমি-ভিটেবাড়ি

গড়াই নদীর আকস্মিক ভাঙনে প্রায় ৩০ বিঘা ফসলসহ কৃষি জমি ও নদীপাড় ভেঙে নদীতে চলে গেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৫০ বিঘা কৃষিজমি ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০০টি পরিবারের মানুষ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় তেবাড়িয়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর স্ত্রী মদিনা খাতুন (৬২) আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘তোমারে চাচা চলে গেছে (মারা গেছেন) সেই মেলা দিন। এহেনে (এখানে) ৩০ বছর ধরে বাস করছি। তয় আগে কোনোদিন এ্যাম্বা (এভাবে) ভাঙা দেখিনি। কিছুক্ষণ পর পরই পাড় ভাঙে ঢপ্পাস করে পড়ছে। কখন জানি ঘরখানায় ভাঙে যায় এ ভয়ে আছি।’ তার ভাষ্য, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এ বছর চর জেগেছে নদীর মধ্যে। কিনারা দিয়ে স্রোত গড়ছে। আর পাড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তার।

জানা গেছে, গড়াই নদীর কূলঘেঁষে কুমারখালী পৌরসভা ও উপজেলা শহর অবস্থিত। ১৮৬৯ সালে গঠিত প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়ার শহিদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আগ্রাকুন্ডা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নেই। এর মধ্যে সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। গেল এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ বিঘা ফসলসহ কৃষি জমি ও নদীপাড় ভেঙে চলে গেছে নদীতে। এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৫০ বিঘা কৃষিজমি ও অন্তত ৩০০টি পরিবারের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার-পাঁচ বছরে তেবাড়িয়া-আগ্রাকুন্ডা এলাকায় কোনো কাজ হয়নি। ফলে নদীর মধ্যে চর জেগেছে। আর পানির স্রোত গড়ছে পাড়ের কিনারা দিয়ে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, তেবাড়িয়া শহিদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে আগ্রাকুন্ডা এলাকার কৃষক ছেইমান শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার গড়াই নদীর পাড়। নদী থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূর দিয়ে চলে গেছে সিসিঢালাই সড়ক। সড়ক ঘেঁষে কয়েকশ কাঁচাপাকা বাড়ি। বাড়ি পেছনে অবস্থিত নদীপাড়ে সরিষা, ভুট্টা, তিল, পেঁয়াজসহ হরেক চাষাবাদ করা হয়েছে। শুকনো নদীর মধ্যে দিয়ে জেগেছে চর। কিনারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। থেমে থেমে ভেঙে পড়ছে নদীরপাড়।

এ সময় আগ্রাকুন্ডা গ্রামের কৃষক সেইমান শেখ বলেন, বহুবছর পর নদীতে ভাঙন লেগেছে। ফসলসহ অন্তত ৩০ বিঘা জমি গেল সাতদিনে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন বসতবাড়ি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সরকারি লোকজন এসে ঘুরে গেছেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তেবাড়িয়া গ্রামের চা বিক্রেতা সমীর চাকি বলেন, নদী শুকিয়ে এবার মধ্যে চর পড়েছে। ফলে পাড়ের কুল দিয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে আর ভাঙছে। এতে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি সড়ক, মসজিদণ্ডমন্দির, ছোট-বড় নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। তার ভাষ্য, নদীর খেলা বুঝা বড় দায়। পানি কমলেও ভাঙে, বাড়লেও ভাঙে। দ্রুত পাকা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

তেবাড়িয়া শেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মোশাররফ হোসেন বলেন, নদীপাড়ে ২২ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ঘাসের চাষ রয়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় ঘাসের কাছে চলে এসেছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা দরকার। খবর পেয়ে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বাঁধ নির্মাণ বা ভাঙন রোধের কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আখতার বলেন, ভাঙনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। পাউবোর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত