
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দুই ভাইবোন, মশিউর রহমান ও মারুফা আক্তার। অল্প পুঁজিতে শুরু করা তাদের এই খামার এখন শুধু নিয়মিত আয়ের উৎসই নয়, বরং আশপাশের অনেক তরুণের জন্যও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে। দুমকী উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝি বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে ভিন্ন এক চিত্র। চারপাশে হাঁসের ডাকাডাকি, উঠোনজুড়ে সাদা বাদামি ডিম আর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দুই ভাইবোন। এখানেই গড়ে তুলেছেন প্রায় ২,১০০ হাঁসের একটি আধুনিক খামার।
খামারের মালিক মশিউর রহমান জানান, একসময় তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় শহরের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে হয় তাকে। তখনই নতুন করে কিছু করার চিন্তা আসে। তিনি বলেন, ঢাকায় কাজ করতাম। অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরি। এরপর ভাবলাম, বসে না থেকে কিছু একটা করতেই হবে। তখন হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নিই। শুরুতে ভয় ছিল, কিন্তু এখন মনে হয় সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে খামারটির যাত্রা শুরু করেন মশিউর ও তার বোন মারুফা। তারা খাকি ক্যাম্বল ও চিংডিং জাতের মোট ১,৩০০ হাঁসের বাচ্চা কেনেন, প্রতিটি বাচ্চার দাম পড়েছিল প্রায় ২০০ টাকা। হাঁসের খাবারের জন্য প্রতিদিন শুটকি, ভুট্টা, চালের কুঁড়া ও ডালের গুঁড়া মিশিয়ে প্রায় ছয় হাজার টাকার খাবার প্রস্তুত করতে হয়। খামারের পাশে থাকা পুকুরে হাঁসগুলোকে ছাড়া হয়, ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে তারা। বর্তমানে তাদের খামারে ২,১০০ হাঁস রয়েছে।
খামারের দৈনন্দিন কাজের বড় একটি অংশ সামলান মারুফা আক্তার। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১,৪০০ এর বেশি ডিম পাওয়া যায়। পাইকাররা হালি ৬০ টাকা দরে ডিম নিয়ে যায়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা লাভ থাকে। এতে আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলছে। বর্তমানে খামারে থাকা হাঁসগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় বারো লাখ টাকা। শুধু হাঁসই নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের শতাধিক কবুতর ও ছাগল পালন করছেন মশিউর। যা থেকে বাড়তি আয় করছেন তারা, যা খামারের আর্থিক ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে। তবে সফলতার এই পথ পুরোপুরি মসৃণ নয়। নিয়মিত ভ্যাকসিন, ওষুধ ও রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য বাড়তি খরচ করতে হয় বলে জানান খামার মালিকরা। সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার আক্ষেপের কথা জানিয়ে মশিউর বলেন- যদি প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা পেতাম, তাহলে আরও উন্নত জাতের হাঁস পালনের পরিকল্পনা ছিল। এ বিষয়ে দুমকী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. আলাউদ্দিন মাসুদ বলেন, খামারটির তথ্য আমাদের কাছে এখনও নেই। তাছাড়া আমাদের জনবল সংকটের কারণে সেবা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে তবে তারা অফিসে যোগাযোগ করলে পরিদর্শনের মাধ্যমে সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। হাঁসের ডিম ও মাংস দুটোরই বাজারে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পিতভাবে হাঁস পালন করলে অল্প পুঁজিতেই লাভবান হওয়া সম্ভব। সময়মতো সরকারি পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে মশিউর ও মারুফার মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণী হাঁস পালনকে পুঁজি করে স্বাবলম্বী হতে পারেন এমনটাই আশা স্থানীয়দের।