
মৌসুমের শেষে এসে উত্তরের জেলা নওগাঁয় জেকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার সাথে বইছে মৃদু বাতাস। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে পথ ঘাট। যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভোর থেকে নিম্নচাপের মতো ঝিরঝির করে ঝরছে কুয়াশা। মৌসুমের শেষে এসে শীত চোখ রাঙাচ্ছে। গত কয়েক দিন ১১-১২ ডিগ্রির ঘরে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। তাপমাত্রা কমে আসায় বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। দুপুরের পর সূর্যের দেখা মিললেও একেবারে নিরুতাপ। বিকেলের দিকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পর থেকে হালকা বাতাসে শীত অনুভূত হয়।
গতকাল শুক্রবার সাতসকাল শহরের মুক্তির মোড়। গাঁজা সোসাইটি অফিসে প্রবেশের বাম পাশে কাজের সরঞ্জাম রেখে অপেক্ষা করছেন নানা বয়সী শ্রমজীবীরা। চোখে মুখে তাদের অসহায়ত্বে ছাপ। সাইকেলে বাঁধা আছে ঝুঁড়ি, কোদাল, ভার, বেলচা ও কাস্তে। সাইকেলগুলো পাশে রেখে কেউ বসে কেউ বা দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। প্রতিদিন সকালে শহরের মুক্তির মোড়, গোস্তহাটির মোড়, বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও ব্রীজ মোড়ে শতাধিক শ্রমজীবীরা তাদের শ্রম বিক্রি করতে ছুটে আসেন। কারো শ্রম বিক্রি হয় আবার কাউকে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। অনেকে শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূর থেকে আসেন। তবে বয়স্কদের তুলনায় যুবক ও শক্তপোক্ত শ্রমীকদের কাজের চাহিদা বেশি থাকে এবং তাদের শ্রমও বেশি বিক্রি হয়। তবে গত কয়েকদিনে শীতে কাজের চাহিদা কমে আসায় শ্রমজীবীদের শ্রম বিক্রি হচ্ছে না। শ্রম বিক্রি না হওয়ায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। সকাল ১০টা পর্যন্ত কারো কোন দিনমজুর কাজ পায়নি। অনেকে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। শহরের চকবাড়িয়া মহল্লার বয়জেষ্ঠ্য নুরুল ইসলাম বলেন- সকাল সাড়ে ৭টায় মুক্তির মোড়ে আসা হয়। গত কয়েকদিন থেকে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। এমন অবস্থা ঘর থেকে বের হওয়ায় কষ্টকর। তারপরও কাজের খোঁজের মুক্তির মোড়ে এসে অপেক্ষা করছি। কাজের চাপ কমে গেছে। মাসে ৭-৯ দিন কাজ হচ্ছে। শীতের কারণে কাজ আরো কমে গেছে। আমরা মুলত চুক্তি ভিত্তিক কাজ করি। দিন হাজিরা কাজ করে পোশায় না।
নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নরে বনগাঁ গ্রামে দিনমজুর আসলাম হোসেন বলেন- পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। শহর থেকে ১২ কিলোমিটর দুর থেকে মুক্তির মোড়ে সকালে আসা হয়েছে। কয়েকদিন থেকে কাজ হয়নি। শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে মাসে ৮-১০ দিন কাজ হচ্ছে। কাজ না থাকায় ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। দোকান বাঁকী পড়েছে।
আয় রোজগার কমে আসায় পরিবার নিয়ে চলাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি। দুবলহাটি গ্রামের দিনমজুর কুদ্দুস হোসেন বলেন- পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিনজন। শীতে কাজকাম নেই। দিন হাজিরা কাজে পরতা হয় না। একদিন কাজ করলে পরদিন বসে থাকতে হয়। চুক্তিভিক্তিক কাজ করলে কয়েক দিন কাজ করা যায়। সবধরনের কাজ করা হয়। কাজের কোনো সমস্যা নেই। তবে কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। দিন দিন যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তাতে আমাদের মুজুরি বাড়ছে না। তবে কয়েক দিন পর ধান লাগানো শুরু হলে ব্যস্ততা বাড়বে।