ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সরকারের উদ্যোগ সফল হোক

পাচারের অর্থ ফেরত আনা
সরকারের উদ্যোগ সফল হোক

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবার তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সুইজারল্যান্ডের পৃথক এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিগগির এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। এ সংক্রান্ত নথি বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে উদ্ধারকৃত অর্থের ১০ ভাগ কমিশন হিসাবে পাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সফলতার নজির রয়েছে। বিশ্বজুড়ে রয়েছে তাদের শাখা অফিসের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার করে পাচার হয়েছে। এ হিসাবে দেশ থেকে ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা।

জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সিকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তাদের পাচার করা অর্থ উদ্ধারে তথ্যের অনুসন্ধান, অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া, সংশ্লিষ্ট দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা ও প্রয়োজনে আইনি লড়াই করার মতো সব ধরনের সামর্থ্য রয়েছে। এছাড়া একই সময়ে এদের একাধিক দেশে কাজ করার যথেষ্ট সক্ষমতাও আছে। ফলে পাচার করা টাকা ফেরাতে এসব এজেন্সিকে নিয়োগ দেয়া যুক্তিযুক্ত মনে করছে সরকার। এজন্য চুক্তি হওয়ার পর এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সরকারের বিদেশে অবস্থিত দূতাবাস বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখবেন। তবে গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্নে এজেন্সিগুলোর নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এটাও জানিয়েছেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরানো খুব সহজ হবে না। কারণ, যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, সেসব দেশের আইন ও বাংলাদেশের আইনের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। এছাড়া যিনি যে দেশে টাকা পাচার করেছেন, সেদেশে তিনি আমানতকারী হিসাবে সুরক্ষা পাবেন। তবে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে কর ফাঁকি ও মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ প্রমাণ করা গেলে তা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। দেশ থেকে নানাভাবে অর্থ পাচারের ঘটনা বহুল আলোচিত। দেশের ব্যাংক খাতসহ সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতার জন্য অর্থ পাচার অনেকাংশে দায়ী। এ প্রেক্ষাপটে সরকারের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগটি প্রশংসনীয় হলেও তা কতটুকু সফল হবে, সময়ই তা বলে দেবে। তবে একথা ঠিক, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়। মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যারা অর্থ পাচারের পেছনে সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। তাই বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি অর্থ পাচারকারীদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করি আমরা। আবার যাতে অর্থ পাচার না হয়, সে উদ্যোগও নিতে হবে। কারণ ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যেভাবে অর্থ পাচার হয়েছে, সেই পথ চিরতরে বন্ধ না করলে পুনরায় এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত