ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হোক

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হোক

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়। সেদিন পিলখানায় ঘটেছিল ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ড। সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এতো বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারকে একসাথে জীবন দেয়া ইতিহাসে বিরল।

ঘটনার সময় জানা না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে জানা যায় যে, কিছু অফিসারকে বিদ্রোহের সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা হলেও বেশিরভাগ অফিসারকে হত্যা ও তাদের পরিবারবর্গকে নির্যাতন ও নিপীড়ন এবং সম্পদ লুণ্ঠন করা হয় ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি দিনভর। সেদিন পিলখানার আশপাশে মোতায়েন ছিলেন এবং বর্তমানে দেশে বা বিদেশে অবস্থান করছেন এমন অনেক সামরিক কর্মকর্তাই এ মর্মে মতামত দিয়েছেন যে, যদি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাবাহিনী পাঠানো হতো তাহলে বেশিরভাগ সেনা অফিসারকে বাঁচানো যেত। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সেনাবাহিনী তাদের যথাযথ রসদ নিয়ে অ্যাকশনে যেত তাহলে সর্বোচ্চ আধাঘণ্টার মধ্যে পুরো পিলখানাকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যেত। সেদিন হত্যাকারীরা শুধু অফিসারদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। তাদের লাশ পৈশাচিক কায়দার মাটিচাপা দিয়েছিল। তাদের পরিবার পরিজনের ওপরও নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের সোনা, অলঙ্কার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুণ্ঠন করেছে। এগুলোর সাথে কারা জড়িত ছিল? দৃশ্যমান কারা ছিল আর অন্তরালে থেকে কারা পরিচালনা করেছে- এসব প্রশ্নের উত্তর আজো অজানা। ওই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড কি শুধুই কথিত ডাল-ভাত প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে? এর মূল হোতা কারা? বাইরের কোনো শক্তি কি এতে জড়িত? এরও কোনো সঠিক উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই দাবি উঠেছিল সুপ্রিমকোর্টের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন বা কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে তদন্ত করার সুযোগ দেয়া যাতে তারা প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করতে পারেন এবং প্রকৃত দোষী ও পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে পারেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। তারা রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সুরাহা করতে চেয়েছেন। ফলে, হত্যাকারীরা পুরো হত্যাকাণ্ডটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে।

যেহেতু ঘটনার ভিকটিম ছিল সেনা সদস্যরা। তাই নানামহল থেকেই দাবি উঠেছিল যাতে আর্মি অ্যাক্টের আওতায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়। কিন্তু সে পথে না গিয়ে আওয়ামী সরকার প্রচলিত আইনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার করে এবং এতে ৩০০০ জন বিডিআরের জওয়ানকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বিশেষ করে ভিকটিম পরিবারগুলো এ বিচারিক প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নয়। তারা নতুন করে মামলার তদন্ত চায়। দৃশ্যমান অপরাধীর বাইরে গিয়ে অন্তরালের মূল নির্দেশদাতা বা পরিকল্পনাকারীদেরও তারা বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে চায়।

অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন তৈরি করেছেন যারা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করবেন এবং অনুসন্ধান করবেন। বিশেষ করে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহলের সম্পৃক্ততা কিংবা বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের ইন্ধনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো তারা উদ্ঘাটন করবেন এবং প্রকৃত সত্য জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন- এটিই সব মহলের প্রত্যাশা। গুজব বা ধারণা ছড়িয়ে যাওয়া ভালো কোনো বিষয় নয়। এটি সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। আবার কোনো একটি ধারণাকে জোরপূর্বক বা অন্যায়ভাবে দমন করাকেও ইতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি একটি সুষ্ঠু, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্ত একদিকে যেমন বিডিআর ট্র্যাজেডির মূল রহস্য উন্মোচন করতে পারে তেমনি ভিকটিমসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের আস্থা অর্জনেও সহায়ক হতে পারে। প্রকৃত অপরাধীর শাস্তিই ঘটনার ভিকটিমদের মনে প্রশান্তি আনবে, অন্য কিছু নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত