ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রত্যাশার বেড়াজাল ও আত্মসম্মানের আয়না

রাজু আহমেদ
প্রত্যাশার বেড়াজাল ও আত্মসম্মানের আয়না

সবার কাছে নিজের মূল্যায়ন আশা করবেন না। তাতে ভুল হবে, বোকামিও হবে। কাছাকাছি থেকেও আপনাকে ধারণ করার যোগ্যতা সবার থাকবে না। কারো কাছে আপনি তাচ্ছিল্যে ভরা মতলিব্বা! আবার কারো কাছে আপনি সম্মানিত মহোদয় জনাব মতলেব চৌধুরি! কে আপনাকে কী ভাবলো- তাতে কী আসে যায়? যেকোনো মানুষ তার উচ্চতার ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্যকে বিচার করতে পারে না। এতে যদি মন খারাপ হয়, নিজেকে ভালো কাজ থেকে দূরে রাখেন কিংবা প্রত্যাশিত আচরণ না করেন তবে আপনার মাঝেও শিক্ষার অভাব আছে। শিক্ষা কেবল সার্টিফিকেট দিয়ে মাপা যায় না। পারিবারিক ঐতিহ্য থাকতে হয়, সমাজ থেকে ইতিবাচক দিকগুলো রপ্ত করতে হয়। সর্বোপরি নিজেকে পরিবর্তনের প্রেষণা পুষতে হয়। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কত মানুষ অমানুষ!

কত শ্রমিক-কর্মচারী কত বড় বড় মানুষ। বড় লেখক-সাহিত্যিক আর বড় মানুষ-মোটেও এককথা নয়! কার মধ্য কী আছে- পোশাক দেখে অনুমান করা যায় না।

অনেক রত্ন পথের পাশে অনাবৃত থাকে। প্রায় সকল শ্রেণির কয়লা মাটির গভীরে লুকায়িত থাকে। কয়লার স্তূপে হিরাও থাকে। শুধু আলাদা করতে জানতে হয়। মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা জরুরি। কারো সম্পর্কে না জেনে ধারণা করা, অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করা বোকামি। এতে সম্পর্ক নষ্ট হয়। জীবনে কত ম্যানারলেস মানুষের দেখা পাবেন- দাওয়াত খেয়ে খুঁত খোঁজারও কমতি থাকবে না! আপনার অবস্থান নিয়ে মশকরা টিটকারি করবে। আপনার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে দমিয়ে রাখতে চাইবে।

তাতে কী আসে যায়? মনটা তো আপনার নিজের। সেটাকে কোথায়, কোন কথায় অ্যাঙ্গেইজ করবেন- সেটা আপনার নিজস্ব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হোক। সেখানে অন্যের ইন্টারফেয়ারেন্স নিষিদ্ধ থাকুক।

কে আপনাকে সাহেব বলল না, কে দেখে এগিয়ে এসে হাত বাড়াল না কিংবা কে যোগ্যতার কদর করল না- তাতে কী আসে যায়? কিছু কিছু ব্যাপারকে অকৃত্রিম যেতে দিন। ভালোবাসা ভিন্ন রকমের! ভুল ধরলে ভুলের অন্ত নেই। অভিযোগ করলে সবকিছুর সমাধানও নেই। অল্পে তুষ্ট হওয়াই নিয়ম। জীবনের সব মঞ্চে চিফ গেস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না, আশাও করবেন না। কোথাও কোথাও আপনি দর্শক। কোথাও কোথাও আপনি কৌতুকময় চরিত্রে! কী আসে যায় এতে? আপনাকে ভালো রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আপনি। প্রত্যাশা কমিয়ে দিন। যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে হাসিমুখে দিন যেতে দিন। খেতে বসে আপনার থালায় কী এসেছে, গাড়িতে আপনি কোন আসনে বসেছেন কিংবা আপনাকে কে কোন চোখে দেখেছে? ভুলে যান। কিছু কিছু ব্যাপার ইগনোর করুন। সবকিছু দেখতে হয় না, সকল বিষয়ে ভাবতে হয় না। দায়িত্ব ফুরালে, গন্তব্য শেষে আপনাকে হেসে হেসে বিদায় নিতে হবে।

কোথাও যদি জোর করে থাকতে চান তবে অসম্মান বাড়বে। কোন আসরে নিজেকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভেবে অংশগ্রহণ করতে যাবেন না- দুঃখ বাড়বে। মানুষ যা যা অধিক কামনা করে তা তা খুব কম পায়। সাদামাটা থাকুন, সহজ সরল জীবনযাপন করুন- জীবন আপনাকে দু-হাত ভরিয়ে দেবে। সম্মানিত করার মানুষ তো মানুষ নয়- আরেকজন, স্রষ্টা। পবিত্র উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যান, মুখের কথা আর বুকের বিশ্বাসে মিল রাখুন- গন্তব্য নির্ধারিত আছে। আশা নয় বিশ্বাস, পৌঁছাবেন। সেখানে পৌঁছানোর কথা। পথটা পিচ্ছিল তবে আপনাকে সাহায্য করা শক্তি অসীম শক্তির মালিক!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত