উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই সাধারণ মানুষ দিশাহারা। এর ওপর গণপরিবহন খাতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্ধিত এই করের বোঝা মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। বাজেটে এই পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক ও গণবিরোধী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বর্ধিত কর কার্যকর হলে যাত্রীদের ভাড়া বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাড়বে পণ্য পরিবহনের খরচ। কারণ, কর বাড়ানোর ফলে পরিবহনের মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন। পরিবহন খরচ বাড়লে এর প্রভাব সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে পড়বে। বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে ব্যবসা-বাণিজ্যে। দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে। ফলে মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হবে।
বর্তমানে ৫২ আসন বাসের কর ১৬ হাজার টাকা, প্রস্তাবিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কর বাড়ছে ৫৬ শতাংশের বেশি। ৫২ আসনের নিচের বাসের জন্য বর্তমান কর নির্ধারণ আছে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব হয়েছে। এতে কর বাড়বে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এসি বাসে বর্তমানে কর আছে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। এখানে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কর বাড়ছে সাড়ে ৩৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কর বাড়ছে নন এসি মিনিবাসের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নন এসি মিনিবাসের কর ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে সর্বোচ্চ ৯২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন পরিবহনের ক্ষেত্রে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গণপরিবহন খাতে সর্বশেষ কর বাড়ানো হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে। অর্থাৎ ছয় বছর পর কর বৃদ্ধি করা হলো। এখন গণপরিবহন খাতে নিবন্ধন ফি, নবায়ন ফি ও সারচার্জ আদায় করে সরকার। তার সঙ্গে বাড়তি অনুমিত কর বা উৎস কর দিতে হয় মালিকদের। বছরে একবার এই কর আদায় করা হয়। নতুন বাজেটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনসহ মোট ১৩ ক্যাটাগরির পরিবহনের বাড়তি করারোপ করার প্রস্তাব করা হয়।
এনবিআরের সূত্র বলেছে, এই কর সমন্বয়ের সুযোগ আছে। পরিবহন মালিকরা প্রতি বছর যে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেন তার সঙ্গে তা সমন্বয় করা যাবে। কাজেই তাদের ওপর বাড়তি করে চাপ আসবে না। ভাড়াও বাড়ানোর কথা নয়। পরিবহন মালিকরা তাদের প্রকৃত আয় দেখান না। তাই এনবিআর অনুমানভিত্তিক এই কর ধার্য করে। অতীতে দেখা গেছে, কর বৃদ্ধি করলে ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্ন আসে। আন্দোলন ধর্মঘটের হুমকি আসে। এ কারণে কোনো রাজনৈতিক সরকার কর বাড়াতে চায় না। ফলে এই খাত থেকে নামমাত্র রাজস্ব পায় সরকার। আয়কর আদায় বাড়াতে গণপরিবহন খাতে এবারের বাজেটে বাড়তি করারোপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বাজেটে বাড়তি কর বাড়ানোর ফলে ভাড়া বাড়বে। যার প্রভাব যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ওপর পড়বে। সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, যা গণবিরোধী ও অযৌক্তিক। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে দিতে পারতাম। তখন বাড়তি করারোপের দরকার হতো না। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো ঠিক হয়নি। গণপরিবহনকে গতিশীল করতে হলে বর্তমান কর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।
আয়কর আদায় বাড়াতে গণপরিবহন খাতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত যাত্রী পণ্য পরিবহনে চাপ বাড়াবে। যদিও এনবিআর বলছে, এত বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না। কিন্তু পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বাড়তি কর গণপরিবহন খাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে। এটি তুলে না নিলে এর প্রভাব যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ওপর পড়বে। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত গণপরিবহনগুলো কর বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা গুরুত্বের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি না হয়।