ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহর সরকারি স্বীকৃতি : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২০১৯ সাল থেকে সারা দেশে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদযাপন করেছে। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহর সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রতিবছর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয় এবং প্রস্তাবের আলোকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করে। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়নি। অবশেষে ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে অধিদপ্তর থেকে আবারও প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অর্থবিভাগের সম্মতি গ্রহণ করে সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদযাপনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ’ উদযাপনের প্রস্তাব উপস্থাপন করলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ’ উদযাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ’ উদযাপনের প্রস্তাব অনুমোদন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। এ বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে ‘প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ’ উদ্?যাপন দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও আধুনিক, জনসম্পৃক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর খাতে রূপান্তর করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান : ২৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ সকাল : ১০টায় শের-ই-বাংলানগর আগারগাঁও ঢাকায় বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র, জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ। জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং পদক বিতরণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান।

পদক প্রদান : জাতীয় প্রাণিসম্পদ পদক নীতিমালার আলোকে এ বছর প্রাণিসম্পদে বিশেষ অবদানের জন্য ৫টি ক্ষেত্রে মোট ১৫টি পদক প্রদান করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ১টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্য এবং ১টি ব্রোঞ্জ পদক এবং যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩৫ হাজার এবং ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়।

পদকের ক্ষেত্রগুলো : ১. গবাদিপশুর খামার, ২. পোল্ট্রি খামার, ৩. প্রাণি ও প্রাণিজাত পণ্য, ৪. প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, ৫. প্রান্তিক খামারি ও নারী।

পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহ-

গবাদিপশুর খামার : স্বর্ণ পদক- ডাচ ডেইরী লিমিটেড, মো: জিল্লুর রহমান মৃধা, সাতঘড়িয়া, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ; রোপ্য পদক- সুপ্রিম ইকো ব্রিক্স অ্যান্ড এগ্রো লিঃ, মো. আকমল হোসেন, পূর্ব শুলশুলিয়া, টোপেরবাড়ী, ধামরাই, ঢাকা; ব্রোঞ্জ পদক- তন্ময় ডেইরী খামার, মো. আমিরুল ইসলাম, বুড়ারামপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, ঈশ্বরদী, পাবনা।

পোল্ট্রি খামার : স্বর্ণ পদক-মেসার্স এসএসবি পোল্ট্রি ও হ্যাচারী কমপ্লেক্স, মো: ইসমাইল হোসেন টুকু, রকিন্দীপুর, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট; রৌপ্য পদক-পদ্মা ফিড এন্ড চিকস লিঃ, মোঃ আনোয়ারুল হক, বন বিভাগ রোড, হাতিল, জয়পুরহাট; ব্রোঞ্জ পদক- আব্দুর রহিম মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার, মো. আব্দুর রহিম, ঝালুকা, আমগাছী, দুর্গাপুর, রাজশাহী।

প্রাণি ও প্রাণিজাত পণ্য : স্বর্ণ পদক- দুধওয়ালা ফুড প্রোডাক্টস, মো. মোতাহের হোসেন, ২৫/এ, বিসিক শিল্প নগরী, খাদিমনগর, সিলেট; রোপ্য পদক- বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি., জাহিদুল ইসলাম, ১৩৯-১৪০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা; ব্রোঞ্জ পদক- এশিয়া সুইটমিট, জনাব মো. নুরুল বাসার (চন্দন), ডা. ইসাহাক লেন, সূত্রাপুর, বগুড়া।

প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা : স্বর্ণ পদক-হীড বাংলাদেশ, সুব্রত কাম্পু, কেরামত নগর, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার; রৌপ্য পদক-ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, মো. শহীদ উজ-জামান, গোবিন্দনগর, সদর, ঠাকুরগাঁও; ব্রোঞ্জ পদক-মমতা ডেইরী ফার্ম ট্রেনিং এন্ড ডেমোনস্ট্রেশন সেন্টার, তৌহিদ আহমেদ, চরকানাই, হাবিলাসদ্বীপ, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

প্রান্তিক খামারি ও নারী : স্বর্ণ পদক- বেগম পিংকি, প্রয়োজন খামার, আবু বক্করপুর, ৯নং ওয়ার্ড, চরফ্যাশন, ভোলা, রোপ্য পদক- মোছা: পারভীন পিয়ারী, পারভীন দেশী মুরগির খামার, কুসুমশহর, বড়াইল, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট; ব্রোঞ্জ পদক- সাবেরিন নাহার সারা, এফ আর এগ্রো ফার্ম, রঘুরামপুর, আদর্শ সদর, কুমিল্লা।

সেমিনার আয়োজন : জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষ্যে ৪টি সেমিনার আয়োজন করা হয়। আয়োজিত সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাণিসম্পদ খাতের সার্বিক উন্নয়ন, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রসার, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, খামার ব্যবস্থাপনা এবং জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। এই সেমিনার প্রাণিসম্পদ খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ, বাজার সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা এবং টেকসই সেবা ব্যবস্থার রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সেমিনারে মোট চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। ১. প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা সম্ভাবনা ও করণীয়; ২. জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান; ৩. প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই সেবা সম্প্রসারণ: সম্ভাবনা ও করণীয়; ৪. প্রাণিসম্পদ সেক্টর উন্নয়নে বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রবন্ধ। সেমিনারের মাধ্যমে খামারি, বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন অংশীজনকে একই প্ল্যাটফর্মে এনে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদের অবদান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি করে। সেমিনারসমূহে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হক, সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, মো: শাহ্?রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো: খায়রুজ্জামান মজুমদার। সেমিনারসমূহে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. শাকিলা ফারুক, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, মো: শাহজামান খান, পরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, সামসুল আরেফিন খালেদ, প্রেসিডেন্ট, ওয়াপসা-বিবি, ডা. মো: শাহীনুর আলম, পরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ড. মো: মোস্তফা কামাল, পরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জাতীয় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো : জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মোট ১৯৩টি প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। যাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রদর্শনীকে বর্ণিল করে তোলে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো- ১. সরকারি ২০টি; ২. দেশীয় এবং সংকর জাতের গবাদিপশুর ৩৯টি; ৩. সৌখিন পোষা পশু-পাখির ২৪টি; ৪. জেনেটিকস এবং যন্ত্রপাতির ২২টি; ৫. প্রাণিস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান-১৮টি ৬. প্রাণিজ পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ৪৬টি ৭. প্রাণিসম্পদ উপকরণ উৎপাদনকারী ২৪টি। প্রদর্শনীতে অন্যান্য আয়োজন ছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বাহারি খাবারের আকর্ষণীয় ফুড ফেস্টিভেল, যা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে আলাদা উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। দর্শনার্থীরা খেয়েছেন এবং অনেকে খাবার বাসায় নিয়ে গেছেন।

সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি : পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে সাধারণ মানুষ গভীর আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন খামার প্রযুক্তি, উন্নত জাতের প্রাণী, দুধ, ডিম, মাংস উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং আধুনিক ভেটেরিনারি সেবার প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, নতুন উদ্যোক্তা ও সাধারণ খামারিরা নানা তথ্য জানতে পেরে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা, নানা ধরনের পশুখাদ্য ও এর ব্যবহার পদ্ধতি এবং জেনেটিক উন্নয়নের মডেল দেখে তারা প্রাণিসম্পদ খাতের অভাবনীয় অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে। এর ফলে এ খাত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হয়। এ প্রদর্শনী সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা এবং খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

দর্শনার্থীরা দেখেছেন যে প্রাণিসম্পদ খাত শুধু খাদ্য উৎপাদনেই নয়, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তারা মনে করেছেন এ ধরনের আয়োজন মানুষের জ্ঞান বাড়ায়, ভুল ধারণা দূর করে এবং খামার ভিত্তিক কর্মকাণ্ডে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে সহায়তা করে। প্রদর্শনীটি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ছিল তথ্যবহুল, অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রাণিসম্পদ খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক একটি অভিজ্ঞতা।

শিশু কিশোরের অভিব্যক্তি : জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস, কৌতূহল ও আনন্দের এক অনন্য পরিবেশ। তারা প্রদর্শনীতে থাকা বিভিন্ন প্রাণী- গরু, ছাগল, ভেড়া, খরগোশ, হাঁস-মুরগি, কবুতর, পোষাপ্রাণী পাখিকে কাছ থেকে দেখে অভিভূত হয়েছে। অনেকেই প্রথমবারের মতো আধুনিক খামার প্রযুক্তি, বিজ্ঞানভিত্তিক খাদ্য তৈরির মডেল ইত্যাদি দেখে প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নতুন জ্ঞান লাভ করেছে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রাণিসম্পদ খাতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ভূমিকা বুঝতে পেরে শেখার প্রতি আরও উৎসাহী হয়েছে।

প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে শিশু-কিশোররা প্রাণীর পরিচর্যা, খাদ্য, পুষ্টি, রোগপ্রতিরোধ এবং প্রাণিকল্যাণ সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন করেছে। বিভিন্ন স্টলে করা প্রশ্নোত্তর, শিক্ষামূলক ভিডিও, হাতে কলমে প্রদর্শনী এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ কার্যক্রম তাদের কাছে শিক্ষাকে আরও মজাদার করে তুলেছে। অনেক শিশু-কিশোর সাংবাদিকগণকে বলেছেন, তারা এই প্রথম বিপুল পরিমাণ পাখি ও প্রাণী দেখেছেন। তারা মনে করছে এই ধরনের আয়োজন বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণিসম্পদ বিষয়ে আগ্রহ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেকেই বলেছেন, এমন প্রদর্শনী নিয়মিত হলে তারা আরও বেশি শিখতে পারবে এবং দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে নিজেদের ভূমিকা কেমন হতে পারে তা বুঝতে পারবে।

মিডিয়ার ভূমিকা : জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ উদযাপন এবং এই উপলক্ষে সারা দেশে আয়োজন করা প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে। টেলিভিশন, পত্রিকা, অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদিতে প্রচারিত হয়েছে অনুষ্ঠানের খবর, বিভিন্ন প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার ও সংবাদচিত্র, যা দেশের মানুষকে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে প্রদর্শনীর তথ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে। মিডিয়ার ধারাবাহিক কাভারেজের ফলে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য, নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী উদ্যোগ, দুধ, ডিম, মাংস উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, রোগ নিয়ন্ত্রণ মডেলসহ নানা দিক সাধারণ মানুষের কাছে আরও স্পষ্টভাবে পৌঁছে গেছে। এতে প্রদর্শনীর প্রতি মানুষের আগ্রহ, অংশগ্রহণ ও ইতিবাচক মনোভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া মিডিয়া প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব, পুষ্টি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, গ্রামীণ অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। প্রদর্শনী থেকে সংগ্রহ করা বাস্তব চিত্র, খামারিদের অভিজ্ঞতা, বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং সফল উদ্যোক্তার গল্প তুলে ধরে এক ধরনের অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মিডিয়ার প্রচার প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ, নতুন সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে দেশব্যাপী আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, যা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়নে ও নীতিনির্ধারণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদযাপনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মূললক্ষ্য হলো- জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহকে আরও বৈচিত্র্যময়, তথ্যসমৃদ্ধ এবং দেশব্যাপী জনসম্পৃক্ততার একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা। আগামী বছরগুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর প্রদর্শনী, ডিজিটাল লার্নিং কর্নার, যুব উদ্যোক্তা ফোরাম, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বিজ্ঞানভিত্তিক সেশন, জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রাণিসম্পদের উপর প্রভাব নিরূপণ এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ কার্যক্রম সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রদর্শনীর ব্যাপকতা বাড়ানো, খামারিদের জন্য হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, ভেটেরিনারি সেবাবিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্প আয়োজন এবং নিরাপদ প্রাণিজখাদ্য উৎপাদন বিষয়ে নতুন মডেল প্রদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া ভবিষ্যতে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানকে আরও গবেষণাভিত্তিক এবং উদ্ভাবনমুখী করতে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করার পরিকল্পনা আছে। আরও অনেক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের চ্যালেঞ্জ, রোগ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু ঝুঁকি, খামার ব্যবস্থাপনা, পুষ্টি নিরাপত্তা এবং বিনিয়োগ এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক সেমিনার, নীতি সংলাপ ও বিশেষজ্ঞদের আলোচনা আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষ, খামারি, নারী উদ্যোক্তা ও তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান আরও শক্তিশালী করাই হবে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদযাপনে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মূলভিত্তি। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহায়তা করা হবে। প্রাণিসম্পদ খাতের প্রচার ও জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উদযাপন প্রচারের জন্য মিডিয়া পার্টনার হিসেবে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত