প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেললাইন উপড়ে ফেলার মাধ্যমে যে ভয়াবহ নাশকতা চালানো হয়েছে, তা শুধু রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর এক চরম আঘাত। লাইন তুলে ফেলায় বগি লাইনচ্যুত হয়ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ রুটে যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এই ন্যাক্করজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
রেলপথকে লক্ষ্যবস্তু করার অর্থ কী? রেলওয়েকে বলা হয় সাধারণ মানুষের অন্যতম নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাহন। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পেশাগত ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এই রুটে যাতায়াত করেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে যারা রেললাইনকে বেছে নিচ্ছেন, তারা আসলে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করছেন। একটি আস্ত রেললাইন উপড়ে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং সময়ের প্রয়োজন হয়; জনবসতির কাছাকাছি এমন ঘটনা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কীভাবে ঘটল, তা বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করে।
নিরাপত্তা ও তদারকির অভাব এই নাশকতা প্রমাণ করে যে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। শুধু দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করাই যথেষ্ট নয়; বরং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে গোয়েন্দা নজরদারি ও নিয়মিত টহল বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে নির্জন বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি বা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এখন সময়ের দাবি।
দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই
আইনি কঠোরতা : যারা এই নাশকতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এবং যারা এর পেছনে উসকানিদাতা, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মেরামত ও পুনরুদ্ধার : যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে দ্রুততম সময়ে লাইন মেরামত করে যোগাযোগ স্বাভাবিক করা সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
জনসচেতনতা : রেললাইনের পাশের স্থানীয় অধিবাসীদের সচেতন করতে হবে, যাতে কোনো সন্দেহভাজন তৎপরতা দেখলে তারা দ্রুত প্রশাসনকে অবহিত করেন। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় যে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, তার ভার বহন করতে হবে সাধারণ মানুষকে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক দাবি বা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে জিম্মি করা কোনো সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ হতে পারে না। আমরা আশা করি, সরকার এই নজিরবিহীন নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে এবং রেলপথকে নিরাপদ করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।