ঢাকা বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মনুষ্যত্বের জায়গা থেকে মানবিক হোন

তৈয়বা খানম
মনুষ্যত্বের জায়গা থেকে মানবিক হোন

আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজে বসবাস করছেন। তাদের কেউ শারীরিক আবার কেউ বা মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো তারা স্বাভাবিকভাবে নিত্যদিনের কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারেন না।

ক্ষেত্রবিশেষে তারা নিজেদের অনূভুতি প্রকাশ করতেও ব্যর্থ হয়। তাদের পরিবার তাদের লোকসমাজ থেকে আলাদা করে রাখেন। তাদের ধারণা, হয়তো সেই সন্তানের জন্য তাদের লজ্জায় অবনত হতে হবে। পারিবারিক কিংবা সামাজিক সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো থেকে তাদের আড়াল করা হয়। এভাবে তাদের জন্ম নেয় হতাশা, হীনমন্যতা ও ভয়।

বলা যায়, তাদের বিচরণ এর পৃথিবীটাই আলাদা করে দেওয়া হয়। লোকের তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর বাবা মায়ের অসহায়ত্ব তারা বুঝতে পারেন। শত না পারার মাঝেও মানুষের ভালোবাসা, ঘৃণা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য বুঝার ক্ষমতা তাদের আছে। আমাদের উচিত, তাদের একা অনুভব করতে না দেওয়া।

এখনো অনেকে জায়গায় দেখা যায়, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাও একসাথে পাঠদান করছেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশগ্রহণে করছেন এটা আমাদের জন্য বেশ ইতিবাচক। সমাজে পিছিয়ে পড়া এই মানুষদের মূল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে দেওয়া উচিত নয়। তাদের দুর্বল কিংবা অসহায় প্রকাশ করে কোন শব্দ চয়ন প্রকাশ করা উচিত নয়। এতে তারা মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট পান। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে তাদেরও নানা দক্ষতা রয়েছে। যা কাজে লাগালে সম্ভাবনায় পরিণত হবে। ভালোবাসা ও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অন্য আর পাঁচটা বাচ্চার ন্যায় সবটা করতে পারবেন তারা। সকলের তাদের ভালোবাসা দেওয়া উচিত। তাদের বুঝানো উচিত, তাদের প্রতিবন্ধতকতা নিয়ে জন্ম নেওয়াটা তাদের কোন অপরাধ নয়। তারা আমাদের বোঝা নয়। তারাও মন খুলে মুক্ত বাতাসে বিচরণ করতে পারে, তাদের মাঝেও সম্ভবনা রয়েছে।

সমাজের একটা অংশকে বঞ্চিত করে কখনো দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করা যায়না। তাই, যে মানুষটা আমাদের তুলনায় পিছিয়ে থাকে আমাদের উচিত নয় তারজন্য বাঁচার পৃথিবীটা সংকীর্ণ করে দেওয়া। বরং তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। যেন তারা হীনমন্যতায় না ভোগে। উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেলে দেখা যাবে মানুষগুলো অনেক কিছু করতে পারছেন।

তাই কাউকে তুচ্ছ করে নয় সবাইকে সাথে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো এই হোক আমাদের পণ। প্রতিবন্ধকতা সীমাবদ্ধতা নয় যদি থাকে প্রবল প্রচেষ্ঠা। আমাদের অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে নৈতিক দায়িত্বের জায়গা থেকে। আমরা পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনার আসর না জমিয়ে আমাদের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের ভরসা ও সাহস দেওয়া।

সামান্য ভরসা টুকু কাউকে একজীবন বাঁচার শক্তি দেয়। কারো পরিস্থিতি নিয়ে এমন তামাশা করা উচিত নয় যাতে কেউ আত্মাহনন এর পথ বেঁছে নেয়। নিজে নিরাপদে বাঁচুন এবং অন্যকেও নিরাপদে বাঁচতে সাহায্য করুন।

তৈয়বা খানম

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত