দেশের বিভিন্ন স্থানে ফের ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধও ধর্ষণকারীদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ধর্ষণের পর কিছু নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক নারী আত্মহত্যারও পথ বেছে নিচ্ছেন। একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে গত জানুয়ারি মাসে ২৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যাটা আরও বেশি বলে জানা গেছে। চলতি মার্চ মাসেও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। এক দিনেই ৬টি ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। তবে সংখ্যাগতভাবে যে পরিমাণ ঘটনার হিসাব সামনে আসে প্রকৃতপক্ষে এরচেয়ে বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তার প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে, থানা-পুলিশ আইন আদালতে ঝক্কি-ঝামেলা হবে এরকম চিন্তা থেকে অনেক ভুক্তভোগী নারীই মামলা করতে চান না। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নৈতিক অবক্ষয়, মাদকতা, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবের কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনায় প্রভাবশালীরা জড়িত। তারা ঘটনার পর ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে এ ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেয়ে যান।
স্বামীর জামিনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে ডেকে এনে অন্তঃসত্ত্বাকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ : নরসিংদীতে স্বামীর জামিনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে গৃহবধূকে তিন দিন আটকে রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার রাতে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে সদর উপজেলার মাধবদী থানায় মামলা করেছেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। ওই গৃহবধূর অভিযোগ পেয়ে ইকবাল হোসেন নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এজাহারভুক্ত দুই আসামি হলেন নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীনের ছেলে ইকবাল হোসেন (৪৩) ও আবদুল মোতালেবের ছেলে পাপ্পু মিয়া (২৯)।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ১৫ ফেব্রুয়ারি মাধবদী থানা-পুলিশ তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে নরসিংদী কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সাতটায় গৃহবধূর মুঠোফোনে কল করেন ইকবাল হোসেন। ওই সময় তিনি বলেন, ‘পাপ্পু নামের এক উকিল আছে, তোর স্বামীর জামিন করিয়ে দিতে পারবে। পাঁচদোনা আয়, কথা বলব।’ তার কথামতো সকাল আটটার দিকে পাঁচদোনা মোড়ে গেলে ইকবাল গৃহবধূকে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে আরও চারজন ছিলেন। ইকবাল তাকে উকিল পাপ্পুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে গৃহবধূর কাছ থেকে মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। তিন দিন আটকে রেখে ওই পাঁচজন একাধিকবার ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটার দিকে ইকবাল গৃহবধূকে বাড়ির সামনে রেখে আসেন।
ওই গৃহবধূর ভাষ্য, ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন ইকবাল। ভয়-আতঙ্কে ঘটনা কাউকে জানাননি তিনি। তার স্বামী জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে তার শরীর খারাপের কারণ জানতে চান। ৭ মার্চ ঘটনার বিস্তারিত স্বামীকে জানান তিনি। এরপরই স্বামী, স্বজনসহ গতকাল দুপুরে মাধবদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূকে তিন দিন আটকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে একজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার দুই : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন মো. আশরাফুল ও দীপ সরকার। তারা পেশায় অটোরিকশাচালক।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাযহারুল ইসলাম বলেন, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ওই নারী কয়েক দিন আগে ঢাকায় আসেন। তিনি কাজ খুঁজছিলেন। ঢাকায় এসে একটি মাজারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত রাতে কেরানীগঞ্জে গেলে তিন অটোরিকশাচালক ওই নারীকে থাকাণ্ডখাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে একটি ঘরে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওসি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে শনাক্তের পর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী ওই নারীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার পর তিনি বাবার বাড়িতে যান। কিন্তু সম্পর্ক ভালো না থাকায় পরিবার তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে তিনি ঢাকায় কাজের খোঁজে চলে আসেন। ওই নারী জানিয়েছেন, তিনি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কিশোরী মেয়ের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ধর্ষণের চেষ্টা, হাতেনাতে সৎবাবা গ্রেপ্তার : নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কিশোরী মেয়েকে (১৪) ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নগ্ন ভিডিও ধারণ এবং পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে তার সৎবাবাকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে উপজেলার একটি আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে ধর্ষণচেষ্টার সময় ওই ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয় লোকজন। পরে তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় পর্নোগ্রাফি ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী কিশোরীর মা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ মার্চ কিশোরীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন তার সৎবাবা। পরে তিনি সেই ভিডিও ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি কিশোরী তার মা ও কয়েকজন প্রতিবেশীকে জানায়। ওই ঘটনার পর গতকাল রাতে আবার ভিডিও দেখিয়ে কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সৎবাবা। তখন কিশোরীর ডাক ও চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে সৎবাবাকে আটক করে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেন।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে সৎবাবাকে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয় লোকজন। ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বাদী হয়ে থানায় দুটি মামলা করেছেন।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে করে ফেলেছি- ধর্ষণচেষ্টাকারী শিক্ষক : গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদ্রাসায় শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা ওই শিক্ষককে আটক করে পুলিশে দেন। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন শিশুটির বাবা। গ্রেপ্তার আবদুল মালেক (২৫) উপজেলার মাওনা এলাকার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মাদ্রাসায় সাত বছরের ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন শিক্ষক আবদুল মালেক। এর পর থেকে শিশুটি মাদ্রাসায় যেতে চাচ্ছিল না। শনিবার সে ওই ঘটনার কথা পরিবারের সদস্যদের জানায়। এদিন সন্ধ্যায় তার পরিবারের সদস্য ও এলাকার লোকজন আবদুল মালেককে আটক করেন। একপর্যায়ে তিনি ধর্ষণচেষ্টার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে আবদুল মালেকের ধর্ষণচেষ্টার কথা স্বীকার করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আতিকুর রহমান নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ওই ভিডিওতে ধর্ষণচেষ্টার কথা স্বীকার বলে আবদুল মালেক বলছেন, ‘আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে করে ফেলেছি। এমন কাজ আমি আর কখনো করিনি। তাকে খারাপ কাজ করিনি।’
শ্রীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আখতার বলেন, অভিযুক্ত আবদুল মালেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গতকাল রাতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে শিশুটির বাবা মামলা করেছেন। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
মাদ্রাসাছাত্রীকে গণধর্ষণ, প্রেমিকসহ চারজনের যাবজ্জীবন : বান্দরবানে বিয়ের কথা বলে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে গণধর্ষণের দায়ে প্রেমিকসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বান্দরবান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জেবুন্নাহার আয়েশা এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রাশেদ, মো. কায়ছার, মো. ওমর ফারুক ও মো. হানিফ। এদের মধ্যে কায়ছার কারাগারে থাকলেও অন্য তিনজন এখনো পলাতক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোনে রং নম্বরে কলের সূত্রে মামলার ১নং আসামি রাশেদের সাথে পরিচয় হয় ডুলাহাজারা মারুফিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত এক ছাত্রীর। দীর্ঘদিন মোবাইল ফোনে কথাবার্তায় তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাশেদ ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি মোবাইল ফোনে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ের প্রস্তাবে প্রেমের টানে পরের দিন সে চলে আশে আমিরাবাদে। ওই ছাত্রীর মোবাইলে কল করে মামলার ৩নং আসামি ওমর ফারুক জানান রাশেদ আসতে দেরি হবে, তাই তার সাথেই পদুয়া বাজারে যেতে হবে। পদুয়া বাজারে একটি খবার হোটেলে দেখা হয় ভিকটিমের সাথে রাশেদের। পদুয়া বাজারে আসেন মামলার ২নং আসামি কায়সার ও ৪নং আসামি হানিফ।
পরে একসঙ্গেই একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওই ছাত্রীকে নিয়ে কাজি বাড়ির উদ্দেশ্যে তারা রওনা হন। পরে অটোরিকশাটি বান্দরবান সদর উপজেলার ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেনপং ম্রো এর খামারের পশ্চিমের বন বিভাগের রিজার্ভ পাহাড়ের ঢালে আনা হয়। সেখানে ওই ছাত্রীকে রাশেদ ও তার সহযোগীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে স্থানীয়রা মেয়েটির চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার ও রাশেদসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
নকলায় শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার : শেরপুরের নকলায় বিস্কুট দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ বছরের এক কন্যা শিশুকে ভুট্টা খেতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চাঁন মিয়া ওরফে লছা নামে এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিষয়টি জানিয়েছেন নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান। এর আগে গত শনিবার দুপুরে উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের পাইস্কা মধ্যপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার চাঁন মিয়া ওরফে লছা ওই গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে ও ধর্ষিতা শিশুর প্রতিবেশী দাদা।
ভুক্তভোগী পরিবারের বরাতে পুলিশ জানায়, শিশুটি ও চাঁন মিয়া একই গ্রামের কাছাকাছি বাড়িতে বসবাস করেন। গত শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে খেলছিল ওই শিশু। এসময় বৃদ্ধ চাঁন মিয়া তাকে বিস্কুট কিনে দেয়ার প্রলোভন দিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি ভুট্টা খেতে শিশুটিকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটির ডাকচিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে চাঁন মিয়া পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাতে নকলা থানায় একটি মামলা দায়ের করলে রাতেই চাঁন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় শিশুর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বৃদ্ধকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে নেয়া হয়েছে। আর ভুক্তভোগী শিশুর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ: অভিযুক্ত শিক্ষককে আদালতে তোলার সময় গণধোলাই : ঠাকুরগাঁওয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া স্কুলশিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিককে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার তাকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামের আদালতে তোলা হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিন আদালতে তোলার সময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে দেখেই উৎসুক জনতা গণধোলাই দেয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অন্যদিকে ধর্ষকের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা। এসময় তারা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন। পরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেন। তাদের শান্ত করতে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা আশস্ত করে বলেন, কোনোভাবেই যেন অপরাধী আইনের ফাঁক দিয়ে বের না হতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। প্রমাণিত হলে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে অপরাধীর।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ঘটনার ১২ ঘণ্টার পর গত শনিবার রাতে সদরের ভুল্লী থানায় শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিকের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিক স্কুলের বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ান। প্রতিদিনের মতো প্রাইভেট পড়তে যায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। এসময় সুযোগ বুঝে একটি কক্ষে নিয়ে পাশবিক নির্যাতনের পর ধর্ষণ করে পালিয়ে যান পাষ- শিক্ষক। পরবর্তীতে শিশুটির চিৎকার-চেঁচামেচিতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসার আগেই ওই শিক্ষকের লোকজন তাকে উদ্ধার করে জেলা শহরের সেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন। গোপনে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করার কথা জানতে পেরে সাংবাদকর্মীরা ছুটে গেলে দ্রুত সময়ে শিশুটিকে জেনারেল হাসপাতালে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এসময় সংবাদকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন ওই প্রতিষ্ঠানের সবুজসহ ধর্ষকের অন্য দালালরা। ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে জেলার অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০১৯ সালে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪১৩টি। ওই বছর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৭৬টি। আর ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে ২২৪ জনকে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে ৯৯৯টি। ২০২০ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬২৭টি। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন। ৩২৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ১ হাজার ১৪০টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে ১ হাজার ২৩১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৪৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ২৯৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে ৯১৬টি। ২০২২ সালে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৩৬টি। ৪৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ১৫৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে ৬৫৯টি। ২০২৩ সালে ধর্ষণের ঘটনা কমেছে। ওই বছর ৫৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৩৩ জন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন। আর ১২৯ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ৪৩৩টি ঘটনায় মামলা হয়েছে।