বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুতসম্পন্ন করতে হবে। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে।’ তিনি বলেন, ‘এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যেন বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে শহিদ জিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। বাস্তবায়ন করি কোটি মানুষের বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্নকে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘গণঅভ?্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহিদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এসব দাবি জানান তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়সহ আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা এবং শহিদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিতের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট আমাদের মাঝে ১ বছর পর ফিরে এসেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্টদের নির্মম, অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, গুম-খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার। এই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছে, তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক শ্রদ্ধা, আহতদের সমবেদনা। তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে।’ তিনি বলেন, ‘গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার যারা হয়েছেন- তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’
বিএনপি জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চায় জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনগণের সরাসরি ভোটে জবাবদিহিমূলক ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়। তারেক রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পলায়নের পরই আমার প্রথম বক্তব্যে বলেছিলাম, তার মধ্যে ছিল- গণঅভ্যুত্থানে যারা তাদের সন্তান হারিয়েছেন, সেই মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। অনেকেই প্রিয়তম স্বামী ও প্রিয়তম ভাইকে হারিয়েছেন। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ। একজন শহিদ শুধু আপনাদের স্বজন নয়, তারা দেশের গৌরব ও মুক্তিকামী জনতার। তাদের জানাই শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন মানুষ ভোলেনি। তেমনই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিভিন্ন স্থাপনা শহিদদের নামে নামকরণের চিন্তা আমাদের আছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের জন্য কিছু ভাবনা তুলে ধরছি। আমরা দেশকে একটি চিরস্থায়ী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চাই, যেখানে জনগণের হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা। তবেই রাজনৈতিক দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং শহিদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষও উপস্থিত ছিলেন। শহিদ পরিবারকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, দেড় দশকের আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। অপহরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় মানুষ শহিদ হয়েছেন। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছেন। শিশু বাচ্চারও শহিদ হওয়া থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় এভাবে শহিদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধর মতো অনেকেই জীবন দিয়েছেন। মানুষের প্রশ্ন যে এভাবেই কি মানুষ জীবন দিতে থাকবে। তারা তো কানাডায় বেগমপাড়া করার দাবিতে আন্দোলন করেনি, জীবন দেয়নি।
তিনি বলেন, একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর কম সময় নয়। এই সময়ে মানুষের ত্যাগ আমরা ভুলে যেতে চাই না। বরং যারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি তাদের অঙ্গীকার হলো- নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুশৃঙ্খলর রাজনীতি, ওয়াদা পূরণের রাজনীতি। এসময় ভবিষ্যতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশ গঠনের কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করে কাজ করব। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। জাতীয় ঐক্যে সব দলের এক হওয়া জরুরি নয়। তাঁবেদার অপশক্তি যেন মাথাচড়া দিতে না পারে, সেদিকে জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ?ও ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন, এই কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্মসদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম আদিব, এনডিএম’র চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমি, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ মালিক, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, নজরুল ইসলাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মিফতাহ সিদ্দিকী, নিলোফার চৌধুরী মনি, ড. মাহদী আমিন, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত ব্যক্তি, শহিদ পরিবার ও এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ১২ দলীয় জোটের সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, বাসস’র চেয়ারম্যান সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. আব্দুল হাই সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম (সিআইপি), প্রকৌশলী একেএম আমিরুল মোমিন বাবলুসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের আন্দোলনে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের মা, বোন, ভাই, ছেলে কিংবা বাবাকে হারিয়েছে। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের বাহিনী ছোট শিশু সন্তান থেকে শুরু করে ছাত্রদের গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছে। এই পরিবারগুলো খুবই অসহায়। তিনি বলেন, আজকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে- আমরাই তো ২০২২ সালে প্রথমে ২৭ দফা পরে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি। অথচ বালা হচ্ছে বিএনপি সংস্কার মানছে না। এটি অপপ্রচার। আপনারা আমাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো দেখুন, বুঝুন। ইতিমধ্যে প্রায় অনেকগুলো বিষয়ে যেমন- প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমি তরুণদের বলব- আমরা ১৬ বছর ধরে একটাই বলছি- কে আছো জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো বলেই তো নদী সাঁতরে সমাবেশ করে সরকারের পতন চেয়েছি। আগেই সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি। সুতরাং ঐক্য এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস নেই। বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তন চায়। জুলাই সনদের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। সেটির দায়িত্ব সরকারের। তারাই বলুক যে কোন বিষয়ে আমরা একমত বা দ্বিমত। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপি কখনও আপস করেনি করবেও না। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে পারব।
মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন দেশের বাইরে থেকেও দল, দেশ ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়। বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসবে এটি শুধু বিএনপি নয় অনেকেই ভাবেন। সেজন্যই আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আওয়ামী লীগের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে যেন বিএনপি ক্ষমতায় না আসে। আমরাও বলিনি যে ক্ষমতায় যাব। তবে আমরা ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। নির্বাচন করতে দেওয়া যাবে না বলে যা বলা হচ্ছে- সেটি তো অনৈক্যের জন্য। জাতিকে বিভক্ত রেখে দেশের উন্নয়ন ও মঙ্গল করা যায় না।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐক্য একটি হবে। সেটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য। সেটি ধরে রাখতে হবে এবং সেটিই আমাদের শক্তি। আমাদের স্বপ্ন হবে নতুন বাংলাদেশ। সবার আগে নতুন বাংলাদেশ। পারস্পারিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি হবে। স্বর্গ থেকেও প্রিয় মাতৃভূমি। গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের অবদান ও রক্তের সম্মান আমাদের দিতে হবে। মতভেদ থাকবে; কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা এগিয়ে যাব- সেটিই প্রত্যাশা। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আরও এগিয়ে যাব।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ১ বছর আগের যে চেতনা ছিল, সেটি অপস্রিয়মান। এটি দুঃখজনক। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসছি; কিন্তু ঐক্য খুবই নিতান্ত। অন্যদিকে শত্রুরা বেড়ার ওপরে বসে আছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সমাজে তাদের দোসররা বিরাজ করছে। সবার কাছে বিনীত আবেদন কালবিলম্ব না করে আসুন- জুলাই চেতনাকে জাগরুক করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে যাই। সবকিছু কিন্তু এই মুহূর্তে সমাধান করা যাবে না। যতটুকু ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি, সেটি নিয়েই আপাতত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
জামায়াতের মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াতসহ সবারই অবদান রয়েছে। এই দুই দলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার। আজকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। আমরা অতীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব ২০ বছর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আগামীতেও থাকব ইনশাআল্লাহ।
আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ যাতে আর ক্ষমতায় না আসতে পারে। কারণ দেশের ৪/৫ কোটি মা-বোন মনে করে আওয়ামী লীগ আসলে তাদের সন্তানদের মেরে ফেলবে। কারণ তাদের সন্তানরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিল। সে কারণে তারা; কিন্তু তাদের সুর নরম করবে এবং আবারও রাজনীতিতে আসতে চাইবে। এ ব্যাপারে সবাইকে এক থাকতে হবে। তারা ফিরলে রক্তে লাল করে ফেলবে। আমরা নতুন স্বপ্ন দেখতে চাই। রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেরণা জুগিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। যার মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেইসঙ্গে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল। যাদের আত্মদানে আমরা মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবার, আহত এবং বিশিষ্টজনরা অংশগ্রহণ করায় বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
স্বাগত বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন তারেক রহমান। তিনি প্রবাসে থেকেও আশার আলো দেখিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন- নেতৃত্ব মানে দূরত্ব নয়, নেতৃত্ব মানে জনতার হৃদয় জয় করা। অভ্যুত্থানের আগে ও পরে তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও ভাষণ আমাদের শক্তি জুগিয়েছে। ৫ আগস্টের পর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। তারেক রহমান এখন শুধু বিএনপির নয়, গণমানুষের আস্থা, তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। তার নেতৃত্বে আমরা দেখি একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন- যেখানে থাকবে না দুঃশাসন, থাকবে না অন্যায়, থাকবে শুধু ন্যায়, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র।
গুমের শিকার পারভেজের কন্যার বক্তব্য শুনে কাঁদলেন তারেক রহমান : গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কন্যা নিধি। কিশোরী মেয়েটি বাবাকে দেখে না অনেক বছর। তার বক্তব্য শুনে কাঁদলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা পারভেজের কিশোরী মেয়ে নিধির আকুতি শুনে কেঁদে ফেলেন তারেক রহমান। জায়ান্ট স্ক্রিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেখা গেছে চশমার ফাঁক দিয়ে বারবার চোখ মুছতে। নিধির রয়েছে ছোট্ট একটি ভাই। বাবাকে অনেক দিন দেখে না সে-ও। অনুষ্ঠানে নিধি তাই এই প্রশ্ন ছুড়ে দেয়– ‘আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারব না?’ এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাধ্য কার? গোটা পৃথিবী নিরুত্তর। অশ্রুসিক্ত হন তারেক রহমান। কষ্ট ভাগাভাগি করে নেন সেই কিশোরীর সঙ্গে।
সভায় সারাদেশ থেকে আসা নির্যাতিত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা যন্ত্রণা ও ভোগান্তির করুণ কাহিনি তুলে ধরেন। স্বজন হারানোর বেদনার সঙ্গে আর্থিক টানাপড়েন, দিগ্বিদিক চিন্তা তাড়িয়ে বেড়ানোর কথাও জানান তারা।
গুম ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সকলের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।