ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু

সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক  দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক প্রস্তুতিগুলো শেষ করতে নির্দেশ দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে ইসি। গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসি এদিন সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব বণ্টন করে পাঁচটি কমিটি করে দিয়েছে। তারা নির্বাচনে কে কী দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি ঠিক করে দিয়েছেন। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা, রাজনৈতিক দল, ভোটার তালিকা আইন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

গতকাল নির্বাচন ভবনে অষ্টম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয়সহ সবধরনের ভোট থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বাদ দিয়েছে ইসি। একইসঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট হবে, আগে যেমন ব্যালট পাঠানো হতো। আইটি সাপোর্ট এবং আগেই অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।

বিভিন্ন প্রস্তাবিত পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা প্রস্তাব আছে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যালট প্রিন্ট করা হবে, আরেকটা প্রস্তাব হচ্ছে ব্ল্যাংক ব্যালট, সেখানে প্রার্থীর নাম লিখে ভোটার পাঠিয়ে দেবে। আমরা যদি মার্কা ব্যালটে ছাপিয়ে দুই মাস আগে ব্যালট পাঠাই, যাতে মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়। এসব প্রস্তাব আছে। প্রবাসী ভোটারদের জন্য রেজিস্ট্রেশনের জন্য আলাদা প্রকল্প হবে। আমরা ট্রায়াল প্রসেসে যেতে পারব।

তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রাথমিকভাবে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে। আগের পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট না আসলেও এই পদ্ধতিতে ভোট আসবে। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, বেশিরভাগ প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবে।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রক্সি ভোট থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন। প্রবাসীরা আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। পদ্ধতি হবে পোস্টাল ব্যালট। পোস্টাল ব্যালট হবে আইটি সাপোর্টেড। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করছি, অনলাইন পদ্ধতির ট্রায়াল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিতে একটি প্রকল্প নেওয়া হবে। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট আনতে প্রতি ভোটে ৭০০ টাকা ব্যয় হবে।

ইভিএম নিয়ে তিনি বলেন, ইভিএম আরও কোনো নির্বাচনেই ব্যবহার হবে না। এজন্য পৃথক কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইভিএমের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

ইসির ক্ষমতা নিয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা চেয়েছে ইসি। বর্তমানে যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে শুধু সেসব (এক বা একাধিক) কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা ছিল ইসির। কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা ছিল না। এখন পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বাতিলের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার ইসিকে এই বিষয়ে আগের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ নির্বাচন কমিশনার।

সানাউল্লাহ বলেন, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও কারচুপির দায়ে আমাদের শুধু কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ছিল। এখন আমরা শুধু কেন্দ্র নয়, পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছি। আশা করছি, সরকার আমাদের আগের এই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে।

এর আগে ১৯ মে ২০২৩ সালে ইসিকে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা না দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমানে এই আইনের সংশোধন চায় সরকার।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আবহ শুরু হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় কর্মবণ্টন করে এরই মধ্যে পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে কমিশন।

এর মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করবেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) তাহমিদা আহমদ। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার ইসি উপসচিব মো. শাহ আলমের সই করা এ সংক্রান্ত পৃথক অফিস আদেশ থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ ও তদারকির লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ।

এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২)। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)। এ কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

কমিটির কার্যপরিধি ক) জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তা-ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, তদারকি এবং প্রযোজ্য সংশোধন বিষয়াদি; খ) যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাবলি তদারকি; গ) নির্বাচনি কর্মকর্তা-ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি ও সমন্বয় এবং ঘ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি। আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, প্রকল্প পরিচালক, আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়), যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২)। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)। কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

কমিটির কার্যপরিধি

ক) নির্বাচন পরিচালনার কাজের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ; খ) নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের তদারকি ও সমন্বয়; গ) পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, সশস্ত্র বাহিনী, আনসার ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণ; ঘ) ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন; ঙ) ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন নির্বাচনি মালামাল পরিবহন, বিতরণ ও ভোটগ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়তা প্রদান; চ) নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সম্ভাব্য সহিংসতা, সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নিরূপণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ছ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের তফসিলে নতুন করে যুক্ত করা হচ্ছে ৪৬টি প্রতীক। বর্তমানে ইসির তফসিলে ৬৯টি প্রতীক রয়েছে। নতুন এই ৪৬টি প্রতীক যুক্ত হলে ইসির প্রতীক সংখ্যা দাঁড়াবে ১১৫টি। এই তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে প্রতীকের তালিকায় নেই শাপলা। বৃহস্পতিবার ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা এ তথ্য জানায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিলে প্রতীক যুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক চূড়ান্ত করে। কিন্তু কমিশন এই ১৫০টির মধ্যে কাটছাঁট করে ১১৫টি প্রতীক তফসিলে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত দেয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১১৫টি প্রতীক আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এখান থেকে প্রতীক বাতিল বা নতুন প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ জানাতে পারে।

তারা আরও জানান, দলের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া নতুন দলগুলো নিবন্ধন দেওয়ার কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন পেতে এরই মধ্যে ১৪৭টি নতুন দল আবেদন করেছে। তাই ভবিষ্যতে দলের সংখ্যা বাড়লে যাতে প্রতীক কম না পড়ে, তাই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। তবে আইন মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করতে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, এতে শাপলা প্রতীক রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

৪৬টিসহ ইসির প্রতীকের তফসিল দাঁড়াচ্ছে ১১৫টি

আপেল, আনারস, কোদাল, খাট, টেবিল ঘড়ি, ফ্রিজ, মোড়া, ট্রাক, বক, মোরগ, আম, খেজুর গাছ, টেলিফোন, বাঘ, রকেট, আলমিরা, গরুর গাড়ি, টেলিভিশন, বই, রিকশা, ঈগল, গাভি, ডাব, বটগাছ, লাউ, উটপাখি, গামছা, ঢেঁকি, বাঁশি, লিচু, উদীয়মান সূর্য, গোলাপ ফুল, তবলা, বেঞ্চ, লাঙল, একতারা, ঘণ্টা, তরমুজ, বেগুন, শঙ্খ, কাঁচি, ঘুড়ি, তারা, বাইসাইকেল, সোনালী আঁশ, কবুতর, কলম, ঘোড়া, থালা, বালতি, সেলাই মেশিন, চাকা, দাঁড়িপাল্লা, বেলুন, সোফা, কলস, চার্জার লাইট, দালান, বৈদ্যুতিক পাখা, সিংহ, কলার ছড়ি, চাবি, দেওয়াল ঘড়ি, মই, কাঁঠাল, চিংড়ি, দোয়াত কলম, মগ, স্যুটকেস, হরিণ, কাঁপ-পিরিচ, চেয়ার, দোলনা, মাইক, হাত (পাঞ্জা), কাঁস্তে, চশমা, ধানের শীষ, মোটরগাড়ি (কার), হাতঘড়ি, কেটলি, ছড়ি, নোঙর, মশাল, হাতপাখা, কুমির, ছাতা, নৌকা, ময়ূর, হাঁস, কম্পিউটার, জগ, প্রজাপতি, মাছ, কলা, কুড়াল, জাহাজ, ফুটবল, মাথাল, টিউবওয়েল, ফুলকপি, মিনার, কুলা, টিফিন ক্যারিয়ার, ফুলের টব, মোমবাতি, কুঁড়েঘর, টেবিল, ফুলের মালা, মোবাইল ফোন, হাতি, হাতুড়ি, হারিকেন, হক্কা, হেলিকপ্টার। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল রয়েছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ৫১টি। ১১৫টি প্রতীকের মধ্যে ৫১টি থাকবে নিবন্ধিত দলগুলোর জন্য। অন্য প্রতীকগুলো থাকবে ভবিষ্যতে নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত