দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে নিজেদের সেরার আসনে বসিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ঋতুপর্ণা-মনিকারা কেনো দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা কয়েক দিন আগে তার প্রমাণ দিয়েছেন মিয়ানমারে। বাহরাইন, স্বাগতিক মায়ানমার ও তুর্কমেনিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে এএফসি এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়েছেন। আত্মবিশ্বাসের ভেলায় ভেসে বাঘীনিরা আবারও লড়াইয়ে নামলেন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখার মিশনে। সেই লড়াইয়ের শুরুটা হলো দুর্দান্ত। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কান মেয়েদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করল বাংলাদেশের মেয়েরা। গতকাল শুক্রবার বিকালে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লাল সবুজের কন্যারা। মোসাম্মৎ সাগরিকা করেছেন হ্যাটট্রিক, মুনকি আক্তার দুই গোল। এছাড়া একটি করে গোল করেছেন স্বপ্না রানী, সিনহা জাহান শিখা, রুপা আক্তার ও শান্তি মার্ডি। বাংলাদেশ ৯ গোলের ছয়টিই করেছে দ্বিতীয়ার্ধে। মাঠ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ে পিছিয়ে আনা হয় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার বেহাল অবস্থা। এবড়োখেবড়ো এই মাঠে দারুণ শুরু করেছে বাংলাদেশ।
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাঠ কর্দমাক্ত ও ভারী হয়ে গেলেও, বাংলাদেশকে গোলের জন্য ভুগতে হয়নি। গোল উৎসবের শুরু করেন স্বপ্না রানী। তার দৃষ্টিনন্দন ফ্রি কিকে বল বাতাসে ভেসে লাফিয়ে ওঠা গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। তিন মিনিট পর এক ছুটে বাম দিকে দিয়ে বক্সে ঢুকে কাছের পোস্ট দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি আক্তার। ২০তম মিনিটে মুনকির শট গোলরক্ষক ফেরানোর পর শিখা জাহানের ফিরতি শট পোস্টে লেগে ফেরে। একটু পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বক্সে ঢুকতে পারে শ্রীলঙ্কা, যদিও তেমন কিছুই করতে পারেনি তারা। শ্রীলঙ্কার রক্ষণে চাপ ধরে রেখে একের পর এক সুযোগ তৈরি করতে থাকেন সাগরিকা, পুজারা; কিন্তু কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে, কখনও গোলকিপারের দৃঢ়তায় ব্যবধান বাড়াতে পারছিলেন না কেউ।
৩৭তম মিনিটে গোলের খাতা খোলেন সাগরিকা। শিখার দারুণ ক্রস গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে খুঁজে নেয় তাকে। গোলমুখ থেকে অনায়াসে লক্ষভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড। একটু পর স্বপ্নার রক্ষণ চেরা পাস ধরে শিখা জালে বল জড়ালেও অফসাইডের কারণে হয়নি গোল। ৪১তম মিনিটে ছোট ফ্রি কিকের পর আফঈদা খন্দকারের শট গোলকিপার আঙুলের টোকায় বের করে দেন ক্রসবারের ওপর দিয়ে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ছোট বক্সের ভেতর থেকে সাগরিকা গোলকিপারকে পরাস্ত করার পর ওঠে অফসাইডের পতাকা। সেসময় গোললাইনের ওপর শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড় ও গোলকিপার ছিলেন, ফলে অফসাইডের সিদ্ধান্ত জন্ম দেয় বিস্ময়ের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সাগরিকার কাটব্যাকে গোলমুখে অরক্ষিত মুনকি নিখুঁত ট্যাপে জাল খুঁজে নেন। এরপরই অধিনায়ক আফঈদাকে তুলে রুমা আক্তারকে নামান বাটলার। ৫০তম মিনিটে বাম দিক থেকে আসা ক্রস দারুণ প্লেসিং শটে জালে জড়ান শিখা। বড় জয়ের পথে ছুটতে থাকে বাংলাদেশ। ৫৩তম মিনিটে একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে বক্সে ঢুকে নিচু শটে ব্যবধান বাড়ান সাগরিকা। পাঁচ মিনিট পর পুজার কাটব্যাকে প্লেসিং শটে হ্যাটিট্রিক পূরণ করেন এই ফরোয়ার্ড। একটু পরই সাগরিকাকে তুলে তৃষ্ণা রানীকে নামান কোচ। শেষ দিকে নতুনদের পরখ করে নেওয়ায় মনোযোগী হন বাটলার। ৭২তম মিনিটে বন্যার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসার একটু পরই মুনকির বদলি নামান কানন রানীকে। ৮৫তম মিনিটে বক্সের জটলার ভেতর থেকে স্কোরলাইনে নাম লেখান রুপা। যোগ করা সময়ে পাল্টা আক্রমণ থেকে জাসোথারান লায়নসিকা কমানো একমাত্র গোলটি করেন। শেষের বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে বাংলাদেশের হয়ে নবম গোলটি করেন শান্তি।
পাঁচটি দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারত নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সে জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান এই চার দেশ নিয়ে শুরু হয়েছে সাফের এই আসর। টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও এসেছে পরিবর্তন। এখন চার দল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে একে অন্যের সঙ্গে দুবার করে খেলবে। একটি দল ছয়টি করে ম্যাচ পাবে। আর শীর্ষ পয়েন্টধারী দলের হাতে উঠবে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি। ১৩ জুলাই নেপালের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার পর ১৫ ও ১৭ জুলাই টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েদের প্রতিপক্ষ ভুটান। ১৯ জুলাই আবার লঙ্কানদের সামনে পড়বেন স্বপ্না–সাগরিকারা। আর ২১ জুলাই নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক সাফে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ঝুলি বেশ ভারি। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই প্রতিযোগিতায় ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত পাঁচ আসরে চারবারই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।