ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

রাজধানীর মিটফোর্ড স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা খবর প্রকাশ করা হয়েছে। লাল চাঁদ মুসলিম হলেও তাকে হিন্দু দাবি করে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

অন্যদিকে লাল চাঁদকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায়, আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিট। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই কমিটি প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ কারা সৃষ্টি করতে চান, তাদেরকে চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ও একইসঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই। বিএনপির অবস্থান বরাবরের মতই স্পষ্ট- অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

হত্যার ঘটনা তদন্তে বিচারিক কমিশন গঠন চেয়ে রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ:

লাল চাঁদকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ সিদ্ধান্ত দেন। লাল চাঁদকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠন ও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ গত রোববার রিটটি করেছিলেন। রিটটি গতকাল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ১২৫ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালতে রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ নিজে শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী বলেন, রিটে যা চাওয়া হয়েছে, তা চলমান প্রক্রিয়া। আদালত শুনে রিটটি তালিকা থেকে ডিলিট (কার্যতালিকা থেকে বাদ) করে দিয়েছেন। আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, রিট শুনে আদালত বলেন, প্রক্রিয়া তো চলমান। এরপর ডিলিট করে দেন। এখন অন্য বেঞ্চে রিটটি উপস্থাপন করা হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার: লাল চাঁদকে হিন্দু দাবি করে ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গত রোববার রাতে প্রেস উইং ফ্যাক্ট চেক তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়। সেখানে বলা হয়, ‘এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে এবং ডব্লিউআইওএনসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম নিহত মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে হিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে তিনি একজন মুসলিম ব্যবসায়ী।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লাল চাঁদের পিতার নাম মো. আইয়ুব আলী এবং মায়ের নাম আলেয়া বেগম। তার স্ত্রীর নাম স্ত্রী লাকি বেগম। এই দম্পতির দুই সন্তান। ফাতেমা ও সোহান। প্রেস উইং আরও জানায়, ‘ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শিরোনামে সোহাগকে হিন্দু বলে উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে তার ধর্ম বা ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।’ বিবৃতিতে প্রেস উইং অভিযোগ করেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাল চাঁদকে। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে, ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ। লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির বোন মঞ্জুয়ারা বেগম (৪২) মামলাটি করেন। এতে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত সাত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত