অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি শেখ মো. সাকিব রায়হান (২২)। তবে ছোট থেকেই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করতেন। তিন বছর আগে একটি মুঠোফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধির (এসআর) চাকরি নেন। পরে সেটি ছেড়ে দিয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেই চাকরি ছেড়ে কাজ করছিলেন অর্থনৈতিক শুমারির মাঠকর্মী হিসেবে। ১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকার রূপনগর এলাকায় সেই শুমারির তথ্য সংগ্রহের জন্য বের হয়েই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
২৯ জুলাই খুলনা নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী এলাকার বাড়িতে বসে সাকিবকে নিয়ে এমন কথাই জানালেন তার মা নুরুন্নাহার বেগম। ছেলের কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নুরুন্নাহারের। তিনি বলেন, ‘নিজেকে কী বলে সান্ত¡না দেব, ভেবে পাচ্ছি নে। জোয়ান ছাওয়ালডারে এইভাবে কবর দিতে হবে, ভাবতেও পারিনি। আমার ছাওয়াল গেছে, আমি বুঝতেছি কী কষ্ট! এখন ছাওয়ালের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’ তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সাকিব। তিনি ঢাকার রূপনগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এক মাস আগে নেওয়া ওই বাসায় মাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। মা নুরুন্নাহার বেগম ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। এর আগে সাকিব নিজেই লাশ হয়ে বাড়ি ফেরায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন মা-বাবা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৯ জুলাই বিকেলে ঢাকার রূপনগর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন সাকিব রায়হান। তার বুকের ডান পাশে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে মুঠোফোনে সাকিবের মৃত্যুর খবর পান মা-বাবা। সাকিবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালের আধা পাকা বাড়ি। বাড়িতে প্রবেশের পথটিও বেশ জীর্ণ। রান্নাঘরটি গোলপাতা দিয়ে ছাওয়া। ওই জায়গাটুকু নুরুন্নাহার তার পৈতৃকসূত্রে পেয়েছেন। সেখানেই ঘর করে কোনোরকমে থাকছেন। সাকিবের বাবা শেখ মো. আজিজুর রহমান একসময় কাপড়ের ব্যবসা করতেন। এখন বাড়ির সামনে ছোট মুদির দোকান দিয়েছেন। মা নুরুন্নাহার গৃহিণী।
নুরুন্নাহার বেগম বলেন, বিকেল পাঁচটার দিকে কেউ একজন সাকিবের বাবার মোবাইল নম্বরে ফোন করে বলেন, সাবিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনেই মুষড়ে পড়েন তারা। প্রথম দিকে কোথায় কী করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না। পরে ঢাকায় থাকা বড় ছেলে ও জামাতাকে ফোন করে ঘটনাটি জানান। তারাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে খোঁজ করে সাকিবের লাশ পান। নুরুন্নাহার বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দুই ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিল সাকিব। তাকে দুটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্লিনিকে ভর্তি করেনি। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় সাকিব। রাতেই লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সকালে খুলনা নগরের বসুপাড়া কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।