ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গুলিবিদ্ধ হাদি লাইফ সাপোর্টে

* মোটরসাইকেল থেকে গুলি * ডান দিক থেকে গুলি ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয় : চিকিৎসক * বিদেশি নম্বর থেকে ‘হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন’ হাদি * দুর্বৃত্তরা অনুসরণ করছিল হাদিকে, প্রচারণায়ও যুক্ত ছিল
গুলিবিদ্ধ হাদি লাইফ সাপোর্টে

গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে রাজধানীর এভারকেয়ারে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর অবস্থায় হাদিকে উদ্ধার করে ঢামেকে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাত ৮টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, তার মাথায় বুলেটের আঘাত আছে। বুকে ও পায়েও আঘাত আছে। ধারণা করা হচ্ছে পায়ের আঘাতটা রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে হতে পারে। আমরা ঢাকা মেডিকেলে একটা প্রাথমিক সার্জারি (অস্ত্রোপচার) করে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিবারের সম্মতিতেই তাকে এভারকেয়ারে নেওয়া হয়। পরিবার প্রথমদিকে সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এভারকেয়ারে নেওয়ার কথা বলেছে। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাদিকে সেখানে পাঠানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক সাঈদ হাসান বলেছেন, ওসমান হাদির অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের জন্য হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। হাদির জন্য সবার কাছে দোয়া চান সাঈদ হাসান।

রিকশায় যাচ্ছিলেন হাদি, মোটরসাইকেল থেকে গুলি : গতকাল দুপুরে চলন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসে থাকা অবস্থায় হাদিকে যখন গুলি করা হয়, সে সময় ওই রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়েছিলেন সাজ্জাদ খান নামের এক ব্যক্তি। তার সামনেই ওসমান হাদিকে যেভাবে গুলি করা হয়েছে, সেই ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। সাজ্জাদ খান জানান, তিনি ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনে চাকরি করেন। পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে বাইতুস সালাহ জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বেরিয়ে তিনি মসজিদের উল্টো দিকের ‘ডক্টর টাওয়ার’ নামের একটি বহুতল ভবনের সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তার পরিচিত ও অপরিচিত অনেকেই ফুটপাতে ছিলেন। সাজ্জাদ খান বলেন, ওসমান হাদি ফকিরাপুলের দিক থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে পশ্চিম দিকে বিজয়নগরে যাচ্ছিলেন। রিকশায় তার পাশের আসনে আরেকজন ছিলেন। একটি মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি ওই অটোরিকশার পিছু নিয়ে তাদের অনুসরণ করছিলেন। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তির গায়ে কালো একটি চাদর ছিল। ওই চাদর দিয়ে তার হাত দুটি ঢাকা ছিল। তাদের মোটরসাইকেল অটোরিকশার বরাবর এলে পেছনে বসা ওই ব্যক্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে খুব কাছ থেকে চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনা ঘটিয়ে তারা মোটরসাইকেলে করে বিজয়নগরের দিকে চলে যান। গুলির শব্দে রাস্তায় থাকা লোকজন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান উল্লেখ করে সাজ্জাদ খান আরও বলেন, এ সময় সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন হাদি ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেন। এ পর্যায়ে রিকশাটি থামানো হলে সবাই এসে ভিড় করেন। এ সময় হাদির মাথা ও কান থেকে রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছিল। রিকশায় তার পাশে থাকা লোকটি হাদিকে ধরে রাখেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ডান দিক থেকে গুলি ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়, অংশবিশেষ হাদির ব্রেনে : ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ডান দিক দিয়ে গুলি ঢুকে বাম কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। সেই গুলির দুই-একটি অংশবিশেষ ব্রেনে রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ হাদির নিউরোর অভিজ্ঞ সিনিয়র চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেছেন। এর আগে তার সিটিস্ক্যান করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ছোট ছোট দুই-একটি প্রিলেট মানে ছোট পুঁতি থেকেও আরও ছোট ধাতব বলের অস্তিত্ব। অস্ত্রোপচারের সময় সেই রকম একটি প্রিলেট বের করা হয়েছে। আরও দুই-একটি ব্রেনের মধ্যে আছে। এই গুলির কারণে রোগীর ব্রেনের প্রেসার অনেক বেড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধের পাশাপাশি প্রেসার কমিয়ে আনার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ দুর্বৃত্তরা তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল বলে জানান তিনি।

পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডের ডিআর টাওয়ারের সামনে মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা অবস্থায় হাদিকে গুলি করে বলে জানান পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘কারা কী কারণে তাকে গুলি করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আমরা অপরাধীদের শনাক্তে কাজ করছি।’ গতকাল জুমার নামাজের আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে হাদি ফেসবুকে লেখেন, ‘যেহেতু ঢাকা-৮ এ আমার পোস্টার-ফেস্টুন কিছুই নাই, তাই আমার এখন ছেঁড়া-ছিঁড়িরও চাপ নাই। দুদকের সামনে থেইকা জুম্মা মোবারক।’

হাদিকে গুলি, সিসিটিভি ফুটেজে যা মিলল : শরীফ ওসমান হাদি দুর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার দুটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে গুলির শব্দ শোনা যায়। এর কয়েক সেকেন্ড পর একটি মোটরসাইকেলকে সড়ক দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অন্য আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন হাদি। এ সময় ওই অটোরিকশাটির পিছু নেয় একটি মোটরসাইকেল। রিকশাটির ডান পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা একজন হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর মোটরসাইকেলটি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বর্তমানে ঘটনাস্থল রশি দিয়ে ঘিরে রেখেছে র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন।

দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই অনুসরণ করছিল হাদিকে, প্রচারণায়ও যুক্ত ছিল : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। হাদির সমর্থকদের মতে, এ ঘটনায় জড়িতরা আগে থেকেই হাদিকে অনুসরণ করছিল এবং তার নির্বাচনি প্রচারণায় লিফলেট বিতরণেও অংশ নিয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজয়নগর বক্স কার্লভার্ট রোডের ডিয়ার টাওয়ারের সামনে এ কথা জানান ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মো. সাফিউর রহমান। সাফিউর রহমান বলেন, হাদি ভাই আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিল ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সামনে ক্যাম্পেইন করবেন। ঘোষণা অনুযায়ী দলীয় সবাই সেখানে উপস্থিত হচ্ছিলেন। এসময় ওই দুই দুর্বৃত্তও উপস্থিত ছিলেন। তারা গত সপ্তাহেও একদিন আমাদের সঙ্গে ক্যাম্পেইন করেছিল। সব সময় মাস্ক পরা থাকত তাদের, কোনো সময় তা খুলত না। পিআর টিম তাদের ছবি তুলতে চাইলে তারা বলেছেন, ‘মাস্ক খুলা যাবে না, ঝামেলা আছে।’ তাই ছবিগুলো মাস্কের ওপর দিয়েই তোলা হয়। আমাদের কাছে সেই ছবিও রয়েছে।

ইনকিলাব মঞ্চের এ নেতা বলেন, এরপর ক্যাম্পেইন শেষ হলে সবাই নিজের পথে চলে যায়। হাদি ভাইয়ের সঙ্গে তখন নয়জন ছিলেন। তারা তিনটি রিকশা নিয়ে রিকশা প্রতি তিনজন করে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম রিকশায় হাদি ভাইসহ তিনজন ছিলেন। তারা খলিল হোটেলের সামনে একটি মসজিদে নামাজ পড়ে হাইকোর্টের দিকে যাচ্ছিলেন। নামাজ শেষে মসজিদের মুয়াজ্জিনও তাদের সঙ্গে রিকশায় ছিলেন। পরে তারা হাইকোর্টের সামনে খাওয়া সেরে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে যাওয়ার কথা ছিল, যেখানে রাতে একটি প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, হাদি ভাই ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মসজিদে নামাজ পড়ার সময় ওই দুই দুর্বৃত্ত বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নামাজ শেষ করে তারা তিনটি রিকশায় হাইকোর্টের সামনে খেতে যাচ্ছিলেন, তখন ওই দুইজন মোটরসাইকেলে রিকশার সঙ্গে চলে আসে। এরপর হঠাৎ পকেট থেকে পিস্তল বের করে গুলি করে পালিয়ে যায় তারা। ওই দুইজন আগে থেকেই আমাদের সঙ্গে ছিল। কয়েকদিন তারা আমাদের প্রোগ্রামেও এসেছে এবং লিফলেট বিতরণে অংশ নিয়েছে। মোটামুটি আমাদের সঙ্গে পরিচয় গড়ে উঠলেও তারা কখন মুখ দেখায়নি, সবসময় মাস্ক পরে থাকত।

বিদেশি নম্বর থেকে ‘হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন’ হাদি : গুলিবিদ্ধ শরীফ ওসমান বিন হাদিকে ‘হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। গত নভেম্বর মাসে ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন হাদি। ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে দেওয়া ওই পোস্টে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে হাদি লিখেন, ‘গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আওয়ামী লীগের খুনিরা অন্তত ৩০টা বিদেশি নম্বর থেকে কল ও টেক্সট করেছে। যার সামারি হলো- আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে। আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে এবং আমাকে হত্যা করবে। ‘১৭ তারিখ খুনি হাসিনার রায় হবে। ১৪০০ শহিদের রক্তের ঋণ মেটাতে শুধু আমার বাড়ি-ঘর না, যদি আমাকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, ইনসাফের এই লড়াই হতে আমি এক চুলও নড়ব না, ইনশাআল্লাহ।’

হাদি আরও লিখেছিলেন, ‘এক আবরারকে হত্যার মধ্য দিয়ে হাজারও আবরার জন্মেছে এদেশে। এক হাদিকে হত্যা করা হলে তাওহিদের এই জমিনে আল্লাহ লক্ষ হাদি তৈরি করে দেবেন। স্বাধীনতার এই ক্রুদ্ধ স্বরকে কোনোদিন রুদ্ধ করা যাবে না। লড়াইয়ের ময়দানে আমি আমার আল্লাহর কাছে আরও সাহস ও শক্তি চাই। আরশ ওয়ালার কাছে আমি হাসিমুখে শহীদি মৃত্যু চাই। ‘আমার পরিবার ও আমার কলিজার সহযোদ্ধাদের আল্লাহতায়ালার কুদরতি কদমে সোপর্দ করলাম। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। হাসবিয়াল্লাহ।’

ঢামেকে হাদির সমর্থক ও উৎসুক জনতার ভিড়, সেনাবাহিনী মোতায়েন : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে গতকাল ভিড় করেন সমর্থক, সাধারণ মানুষ ও উৎসুক জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢামেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। শাহবাগ থেকে ঢামেক হাসপাতালে আসা রিপন মিয়া বলেন, ‘হাদি ভাইকে ভালো লাগে, তিনি আমার প্রিয় ব্যক্তি। তাকে গুলির ঘটনা শুনে ছুটে এসেছি।’

অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান : শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো ঘটনায় দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল ডিএমপির আট বিভাগে বিশেষ বার্তা দিয়ে সড়কে চেকপোস্ট করে তল্লাশি চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সদরদফতর থেকে। এছাড়াও ডিএমপির ডিবির একাধিক টিম দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের জানান, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা, র‌্যাবসহ দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে সবাই কাজ করছে।

ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ : ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার ঝালকাঠি সদর উপজেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে তারা অবরোধ করেন বলে জানান ঝালকাঠি সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ। অবরোধের ফলে মুহূর্তেই মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই অবরোধে বরিশাল ও খুলনাগামী পথের দূরপাল্লার বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। অবরোধকারীরা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। ‘সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ওসমান হাদি ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বলেন, ‘এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে।’ গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরোনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। এর বাইরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা এবং দৃশ্যত পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওসমান হাদি গত বছর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় আসেন। স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি- করছিলেন গণসংযোগও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত