ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তিনটির বেশি আসনে প্রার্থী নয়

তিনটির বেশি আসনে প্রার্থী নয়

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির অধিক নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হতে পারবেন না- এ মর্মে নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি পরিপত্র জারি করেছে। ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১৩ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হলে, তার সবগুলো মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।’ পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্র বা সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক পদে থাকলে, তা ‘লাভজনক পদ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ধরনের ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে অযোগ্য হবেন।

এছাড়া উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান; সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র; বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত দপ্তর/প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশন/কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে প্রার্থী হতে হলে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ করতে হবে।

প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও পরিপত্রে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ এর ৪৪খ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নির্বাচনী এজেন্টকে (বা এজেন্ট না থাকলে প্রার্থীকে নিজে) তফসিলি ব্যাংকে একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যক্তিগত ব্যয় ব্যতীত নির্বাচন সংক্রান্ত সব ব্যয় এই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিশোধ করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ফরমণ্ড২০ এ নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী এবং ফরমণ্ড২১ এ প্রার্থীর সম্পদ, দায়-দেনা ও বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী দাখিল করাও বাধ্যতামূলক।

পরিপত্রে জানানো হয়েছে, ‘নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী কর্তৃক সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে।’ এ বিষয়ে উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, প্রার্থী নিজে উপস্থিত হয়ে অথবা তার পক্ষে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী যে কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। অনলাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ নেই।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর নির্বাচনী এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মহানগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কিছু এলাকায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক/রাজস্ব/শিক্ষা ও আইসিটি/এল.এ), সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, উপপরিচালক স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারদেরও সহকারী রিটার্নিং অফিসার করা হয়েছে। তাদের অধিক্ষেত্রও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী তারা রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তা করবেন। প্রয়োজন হলে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারির পর রিটার্নিং অফিসার দ্রুত আসনভিত্তিক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। এতে কমিশন ঘোষিত সময়সূচি উল্লেখ থাকবে এবং রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ, সময় ও স্থান জানাতে হবে। সরকারি ছুটিসহ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। প্রার্থী, প্রস্তাবক ও সমর্থনকারীকে সরাসরি উপস্থিতিতেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার দর্শনীয় স্থানে গণবিজ্ঞপ্তি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের গণবিজ্ঞপ্তির একটি নমুনা পরিপত্রের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচনে ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার বাধ্যতামূলক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাধ্যতামূলকভাবে ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গতকাল শুক্রবার ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমানে প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকাই ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন। তবে প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টেরা ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করে মুদ্রণ পূর্বক ব্যবহার করবেন।

সিডি সংগ্রহের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা পর্যায় থেকে কিংবা রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস থেকে আবেদন করতে হবে। ইউনিয়ন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার জন্য ৫০০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডের জন্য ৫০০ টাকা হারে ট্রেজারি চালান বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে মূল্য জমা দিতে হবে। ট্রেজারি চালানের কোড নম্বর ১০৬০১০১১০০১২৫-১৪২৩২৫৩।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রার্থীদের সরবরাহকৃত ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডিকে ছবিসহ মুদ্রিত ভোটার তালিকার সঙ্গে শতভাগ যাচাই করে ভোটকেন্দ্রে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তফসিল ঘোষণার পরপরই ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল চূড়ান্ত করে তাদের নিবন্ধন বিষয়ে দ্রুত অবহিত করতে হবে।

নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতাণ্ডঅযোগ্যতা নির্ধারিত হবে যেভাবে : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী সময়সূচি জারি, সময়সূচির প্রজ্ঞাপন ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রার্থীর যোগ্যতাণ্ডঅযোগ্যতা, নির্বাচনী ব্যয় ইত্যাদি নানা বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে একজন প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা কীভাবে নিরূপণ করা হবে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২(১) এর উপ-দফা (কক) অনুযায়ী একজন প্রার্থী আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি হিসেবে ঘোষিত হয়ে থাকলে, বা উপ-দফা (গ) অনুযায়ী তিনি প্রজাতন্ত্রের বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কাজে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সেই সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২(১) এর উপ-দফা (ড) অনুযায়ী- ‘তিনি যদি কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হন যাহা কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোন ঋণ বা তার কোন কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের পূর্বে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।’

সেইসঙ্গে, একই আদেশের অনুচ্ছেদ ১২ এর দফা (১) এর উপ-দফা (ঠ) অনুসারে কৃষি কাজের জন্য নেয়া ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের পূর্বে ব্যাংক হতে নেয়া কোন ঋণ বা তার কোন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে অনুচ্ছেদ ১২ এর উপ-দফা (ঢ) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে সরকারি টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোন সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেও সেই ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হবার অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।

সবশেষে পরিপত্র তে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২(৩খ) উপ-দফা (২) এর অধীন প্রত্যেক মনোনয়নপত্রের সহিত প্রার্থীর দ্বারা স্বাক্ষরিত একটি হলফনামার সঙ্গে সর্বশেষ আয়কর রিটার্নের কপি সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে। এসব বিধানসমূহ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে, এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতেও এ বিষয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাগেরহাটে ৪, গাজীপুরে ৫ আসন পুনর্বহাল করে ইসির সংশোধিত গেজেট : বাগেরহাটের সংসদীয় আসন সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে আবার চারটি করা হয়েছে এবং গাজীপুরের আসন সংখ্যা ছয় থেকে কমিয়ে পাঁচ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে। গত বুধবার বাগেরহাটের আসন চার থেকে তিনে কমানো ও গাজীপুরের আসন পাঁচ থেকে ছয়ে বাড়িয়ে ইসির গেজেট জারিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে সুপ্রিমকোর্ট। এর আগে, গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ৩০০টি আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে, যেখানে ১৬ জেলার ৪৬টি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করা হয়।

খসড়া সীমানা নিয়ে প্রাপ্ত দাবি, আপত্তি, সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে ইসি ২৪ আগস্ট থেকে চার দিন শুনানি করে। ৩৩ জেলার ৮৪টি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ নিয়ে এসব শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে ৩০ জুলাই খসড়া প্রকাশিত হয়। এরপর মোট ১ হাজার ১৮৫টি আপত্তি এবং ৭০৮টি সুপারিশ জমা পড়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দেশের ৩০০ আসনে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত