ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাড়ল ক্ষোভ-হতাশা

বাড়ল ক্ষোভ-হতাশা

দরজায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ঘিরে বড় দল হিসেবে বিএনপি প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। তবে বড় দল হওয়ায় প্রার্থী নির্বাচনে বিপত্তিও কম নয়। একজনকে দলীয় প্রার্থী করা হলেও যোগ্য বিবেচনায় আরও অনেকেই দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নাখোশ। এই সংখ্যাও কম নয়। মনোনয়ন না পাওয়া এ রকম বহু প্রার্থী এখন বিক্ষোভণ্ডপ্রতিবাদে এলাকা গরম করে রেখেছেন। তাদের কারও কারও আবার শেষ পর্যন্ত তাদের বিবেচনা না করলে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও জোর আলোচনা রয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

নির্বাচন সামনে রেখে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থিতায় রদবদল এনেছে বিএনপি। এতে অনেক প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা আরও বেড়েছে। কিছু কিছু আসনে দলের বিকল্প প্রার্থীরাও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যদিও মনোনয়ন পরিবর্তন মাঠপর্যায়ের জরিপ, অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতে আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসন থেকেও নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১৭ আসনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে। তিনি মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে গতকাল সোমবার তারেক রহমানের পক্ষে ফরম জমা দিয়েছেন। এর আগে এই আসনে জোটপ্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করা আন্দালিভ রহমান পার্থ এখন ভোলা সদর আসনে নির্বাচন করবেন। পার্থ তারেক রহমানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই আসন থেকে ফরম নেননি।

মনোনয়ন তালিকায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা-১২ আসনটি বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে লড়বেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামানের ভোটের অনীহার পর সেখানে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামে একাধিক আসনে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গতকালই এটি নিশ্চিত করা হয়। সম্প্রতি সেখানে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করা হয় এবং গোলাম আকবরের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে প্রার্থীদের সাম্প্রতিক মতবিনিময় সভাতেও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডাকা হয়নি। ওই আসনে নতুন মনোনয়ন পাওয়া গোলাম আকবর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি আগে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ার পর সেখানে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর চট্টগ্রাম-১১ থেকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে; চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।

উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও পরিবর্তন এসেছে। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখানে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে মান্না শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে প্রার্থী করা হয়।

মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে একমি গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।

ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে প্রার্থী করা হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর পরিবর্তে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-১, যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনেও দলীয় ও জোটগত সমীকরণে নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামাল মোল্লার বদলে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে ঝিনাইদহে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খান।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, তার জানা মতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত। প্রতিদিন একাধিক পরিবর্তনের কারণে একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তারা দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারেন না। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হবে, যা দলের হাইকমান্ড ইতিবাচকভাবে দেখবে না। সূত্র বলছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে প্রত্যাশিত প্রার্থীদের মনোনয়ন না দেওয়ায় সমর্থকদের রেলপথ অবরোধ, মহাসড়কে আগুন জালিয়ে বিক্ষোভের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, মনোনয়ন ঘোষিত আসনগুলোতে জনপ্রিয়তা যাচাই করেই প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে।

যেসব আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার শঙ্কা : এই তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন করার জন্য এলাকায় জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে ধানের শীষের কোনো প্রতীক থাকবে না। কারণ বিএনপির পক্ষ থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তিনি তার দলের খেজুরগাছ মার্কায় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজ করছি। এটা দল কীভাবে নিচ্ছে, তা আমাকে এখনও জানায়নি। কারণ দলের নির্দেশনায় গত ১০ বছর এলাকায় কাজ করেছি। মানুষ যা বলবেন, আমি সেভাবেই চলব। আমার এলাকার মানুষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমি প্রার্থী হওয়ার আগে আমার এলাকার কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা বলেছেন যে, আমি না থাকলে তারা অভিভাবকহারা হয়ে যাবেন। তো, তাদের তো ফেলে দিতে পারি না।’

কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে গত শনিবার কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করা হয়েছে। এই আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন ড. রেদোয়ান আহমেদ। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে চান্দিনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল শাওন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হতে পারেন।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়েও বিক্ষোভ হয়েছে জেলা বিএনপির সদস্য আক্তারুজ্জামান বাচ্চুকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে। ময়মনসিংহ-১০ আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে এই আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিকুর রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তার সমর্থকরা গত শনিবার গফরগাঁও রেলস্টেশনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ মুরশেদ আলম। এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। তবে এই আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবালকে প্রথমবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। তিনি মনোনয়নপত্রও কিনেছেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এই আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সদ্য সাবেক সাধরাণ সম্পাদক রাশেদ খান।

নোয়াখালী-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান। এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে সংসদের বিরোধীদলীয় সাবেক চিফ হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুককে। নোয়াখালী-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামিম। তবে এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ইউপি চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. লেয়াকত আলী। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারীর জোনায়েদ সাকিকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য এম এ খালেক, অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার আলোচনা আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মুশকিকুর রহমান বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়ার পক্ষে এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নান। তার সঙ্গে জেলা বিএনপির নেতা কাজী নাজমুল হোসেন তাপসও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে এম এ হান্নান মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসন থেকে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. কামরুজ্জামান মামুনের নির্বাচন করার বিষয়ে আলোচনা আছে। তিনি এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আওয়াল। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. ইকবাল হোসেন খান। ময়মনসিংহ-৮ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জনিয়ার লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। তবে ওই আসনে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা এবং ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শাহ নুরুল কবীর শাহিন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

জামালপুর-৩ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এই আসনে মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. ফায়েজুল ইসলাম (লাঞ্জু) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

মেহেরপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন। এই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাবেদ মাসুদ মিল্টন। নড়াইল-২ আসনে এনপিপি নেতা ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে জোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই আসনে আগে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। এই আসনে তিনবারের এমপি আতাউর রহমান খান স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাঁর বিপরীতে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এই আসনে আপাতত বিদ্রোহী প্রার্থী একজন হলেও সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। কিন্তু মনোনয়নপত্র কিনেছেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এঁদের মধ্যে অন্তত একজন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।

পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক এমপি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন। রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির ছয় নেতা দলীয় সমর্থনের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডল।

এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা দলগুলোর জন্য ১২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। যাদের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা হয়েছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তারা নিজ নিজ প্রতীকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। সমঝোতার আসনগুলোর মধ্যে বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নড়াইল-২ আসনে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যশোর-৫ আসনে ইসলামী ঐক্য জোটের মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস, পটুয়াখালীর-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ঝিনাইদহ-৪ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ঢাকা-১২ আসনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত