
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার কিচেন মার্কেটের সামনে চাঁদাবাজির বিরোধী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ওই এলাকায় কয়েক মাস ধরে নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু হওয়ায় তারা প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, মানববন্ধন শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা পর হামলাকারীরা হঠাৎ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের মধ্যে স্থানীয় যুবদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। কোনো উসকানি ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। আরেক ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিজেদের স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে একটি গোষ্ঠী আবার দোকানিদের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করেছে। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আজ মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুর্বৃত্তদের হামলার পর ব্যবসায়ীরা আবার ঐক্যবদ্ধভাবে লাঠিসোঁটা হাতে হামলাকারীদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান।
কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে একটি মিছিল বের করেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিকে স্থানীয় যুবদলের এক নেতা চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কিচেন মার্কেট কমিটিকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। তার দাবি, এক যুবদল নেতাকে কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধন চলাকালে ব্যবসায়ীদের ওপর একদল লোক হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।
মানববন্ধনে হামলার প্রতিবাদে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় ব্যবসায়ীরা : কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন করায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে কারওয়ান বাজার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে হামলার ব্যবসায়ীরা জানান, যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রহমান কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদা আদায় করছেন। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনের আয়োজন করলে তাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় আব্দুর রহমানের লোকজন। পরে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সবাই নেমে এসে হামলাকারীদের ধাওয়া দেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, পুলিশের সামনে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এই আব্দুর রহমানকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিলও করেন। আব্দুল হান্নান বলেন, আব্দুর রহমান নামের একজনের বিরুদ্ধে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছিলেন। আগেও তারা এমন মানববন্ধন করেছেন। আজকের (সোমবার) মানববন্ধনের সময় আশপাশে পুলিশও ছিল। হঠাৎ অতর্কিতভাবে কয়েকজন এসে তাদের ব্যানার কেড়ে নিতে চেষ্টা করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ঘটে। পরবর্তীতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
কাওরান বাজারে মানববন্ধন চলাকালে হামলা, সেনাবাহিনীর অবস্থান : চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে রাজধানীর কাওরান বাজারে মানববন্ধন চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। জানা গেছে, মানববন্ধন চলাকালে এই হামলার পর ব্যবসায়ীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলাকারীদের তাড়া করেন। এ ঘটনায় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা চাঁদাবাজি বন্ধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাদের ওপর হামলা করা হয়। পাশেই পুলিশের সদস্য ছিল, তবু কীভাবে তারা এই হামলা করতে পারে আমরা জানতে চাই। এ ঘটনার পর আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে হামলাকারীদের প্রতিহত করেছি।
ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে হামলার নিন্দা জানাল ইসলামী আন্দোলন : রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজিবিরোধী মানববন্ধনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, কারওয়ান বাজার দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র। এখানে চাঁদাবাজির প্রভাব রাজধানীর প্রায় সব খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি একটি পুরোনো সমস্যা। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চাঁদাবাজি তো কমেনি; বরং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে চাঁদাবাজরা হামলা করার সাহস দেখিয়েছে। এটা অপরাধকে অপরাধ মনে না করার চূড়ান্ত আলামত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান থাকবে— চাঁদাবাজদের শক্ত হাতে প্রতিহত করুন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন। কোনো রাজনৈতিক দল চাঁদাবাজদের পক্ষ নিলে তা জনগণকে অবহিত করুন। জনতাই সেই রাজনৈতিক দলকে প্রতিহত করবে।