ঢাকা ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অর্থ দ্বন্দ্বে খুন হন খুলনার সাবেক কাউন্সিলর টিপু

অর্থ দ্বন্দ্বে খুন হন খুলনার সাবেক কাউন্সিলর টিপু

কক্সাবাজারে গুলিতে নিহত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্তকৃত কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী টিপুর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ জোহর খুলনার দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা উত্তরপাড়া স্কুল মাঠে জানাজা শেষে কৃষি কলেজ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় কেসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এর আগে কক্সবাজার থেকে শনিবার ভোররাতে টিপুর লাশ দেয়ানার বাড়িতে পৌঁছালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই সেখানে শত শত মানুষ জড়ো হয়। লাশ দেখে অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে টিপুর স্ত্রী ও দু’সন্তানের কান্নায় আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসংলগ্ন হোটেল সি গালের সামনে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে টিপুর বোনের স্বামী ইউনূছ আলী শেখ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। যার নম্বর-১৮/১৮। তবে ঘটনার পরপরই কেসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালু এবং কক্সবাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের টেকপাড়া এলাকার নুরুল কবির ভুট্টকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১৫। যদিও চালুর কক্ষে থাকা রিমি ওরফে রেমি জয়া ওরফে ডা: রেমী মন্ডলকে খুঁজে পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ বলছে, রহস্যময়ী ওই নারীকে গ্রেফতার করতে পারলেই হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালুর ওই হত্যার সাথে জড়িত থাকা না থাকার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার না হলেও তার বিরুদ্ধে খুলনায় অন্যান্য মামলা থাকায় তিনি যে আপাতত: এড়াতে পারছেন না সেটিও অনেকটা স্পষ্ট। জনশ্রুতি রয়েছে হাসান ইফতেখার চালু সেফ নামের একটি এনজিও’র সব সম্পত্তি নিজের নামে আমমোক্তারনামা দলিল করে নিয়ে সেগুলো পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন। কথা ছিল সেফ’র কাছে পাওনা টাকা তিনি পরিশোধ করবেন। কিন্তু ওই টাকা পরিশোধ না করে ক্ষমতার জোরে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এজন্য সরকার পতনের পর পাওনাদারদের পক্ষ থেকে একাধিক মামলা করা হয়। এর ফলে চালু ঢাকা-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার টিপু হত্যার পর আরও অনেক কথা বেরিয়ে আসছে। শোনা যাচ্ছে, কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে হাইকোর্টে রীট করার পর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে খুলনার ৩০ জন কাউন্সিলরের একটি বৈঠক ছিল কক্সবাজারে। সেখানে টিপু ও চালু আগেই চলে যান এবং বাকিদের ২/১ দিনের মধ্যে যাওয়ার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে গোলাম রব্বানীকে হত্যার পর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। যে হোটেলে তারা অবস্থান করছিলেন সেই সি গাল হোটেলের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু এমনটিও জনশ্রুতি রয়েছে। এজন্য ওই হোটেলেই বাকিদের সবার ওঠার কথা ছিল। আর হাসান ইফতেখার চালু অনেকটা লোভের বসেই সেখানে যান এমনটি উল্লেখ করে একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছে, তাকে হয়তো কোন বড় ধরনের অর্থের লোভ দেওয়া হয়েছি। এজন্য তিনি ওই নারীকে নিয়েই একই কক্ষে অবস্থান করেন।

টিপু হত্যার তিন কারণ : স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন ও আন্ডারওয়ার্ল্ড-এর সম্পৃক্ততা এ তিনটি কারণে কাউন্সিলর টিপু হত্যা হতে পারে বলে মনে করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের দেয়া তথ্যমতে, কেসিসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শরিফুল আনাম ও তার ছেলে আশিকুল আনামসহ একটি পক্ষের সাথে গোলাম রব্বানী টিপুরবিরোধের সৃষ্টি হয়। ৫ আগস্টের পর গোলাম রব্বানী টিপুর বাড়িতে বোমা হামলার সঙ্গেও ওই পক্ষটি জড়িত বলে মনে করছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া টিপু দৌলতপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ হত্যা মামলারও আসামি।

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে হুজি শহিদ গুলিতে নিহত হন। এছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় জুলকার নাঈম মুন্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। এ বিষয়টি যেমন খতিয়ে দেখা হচ্ছে তেমনি স্থানীয় অপর এক চরমপন্থি নেতার নামও উল্লেখ করেছেন টিপুর স্ত্রী। সেটিও কতটা সঠিক সেটিও পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কাউন্সিলরের সঙ্গী কে এই তরুণী? হোটেল গোল্ডেন হিলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’-এ দেখা গেছে আটক ইফতেখার, নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সঙ্গে রেমি (২৭) নামের এক নারীও সকাল ৭টায় হোটেলে ওঠেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আসা হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ নিহত কাউন্সিলর টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসংলগ্ন হোটেল সি গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন গোলাম রব্বানী টিপু। তারপর থেকে রেমী নামে ওই নারী পলাতক। রেমি নামে এক নারীর ফেসবুক আইডিতে দেখা গেছে তার নাম ইংরেজিতে (জবসর ঔধুধ) এর বাংলায় ডা. রেমী মন্ডল। প্রাথমিকভাবে তাকে পেলেই টিপু হত্যার রহস্য কিছুটা উদ্ঘাটন করা সম্ভব বলেও তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পুলিশের ধারণা, রেমির বাড়িও খুলনায়। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছেন এবং খুমেক হাসপাতাল থেকেই ইন্টার্নী করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত