ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যাহত

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যাহত

ভোলার লালমোহন উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল। যেকোনো রোগে আক্রান্ত হলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ছুটে যান মানুষজন। তবে বিগত কয়েক মাস ধরে চিকিৎসকের তীব্র সংকটে বেহাল হয়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রম। সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো চরম বিপাকে পড়ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩০টি। এরমধ্যে মেডিকেল অফিসার ১৭ জন, কনসালট্যান্ট ১১ জন, ইউএইচএফপিও এবং আরএমওসহ আরও দুইটি পদ। যার মধ্যে ইউএইচএফপিও এবং আরএমওর পদে লোকবল রয়েছে। তবে মেডিকেল অফিসার নেই ১৫ জন এবং কনসালট্যান্ট নেই ৯ জন। এই চিকিৎসক সংকটের কারণে কেবল বহির্বিভাগেই নয়, নাজুক অবস্থা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ এবং অন্তবিভাগেরও। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডা. মো. ইউসুফ হোসেন তিনি বসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে। বিগত দেড় মাস ধরে তাকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন একাই সেবা দিতে হচ্ছে পুরো বহির্বিভাগের সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের। যদিও সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে আরো ২ জন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দেন। তারা যেসব দিন না থাকেন তখনই বহির্বিভাগের সেবাপ্রত্যাশী ২৫০ থেকে ৩৫০ জন রোগীকে একাই সাধ্যের ভেতর সর্বোচ্চ সেবা দিতে হয় ডা. মো. ইউসুফ হোসেনকে।

তিনি জানান, যেসব দিন আমাকে একা ডিউটি করতে হয় তখন চরম বিপাকে পড়ি। কারণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরো বহির্বিভাগে আমি একাই কোনো দিন ২৫০ জন আবার কোনো দিন ৩৫০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়। তবে সত্যি বলতে একা এতো রোগীকে ভালোভাবে চিকিৎসা দেওয়া কখনোই সম্ভব না। তবুও এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দরিদ্র-অসহায় রোগীরা আসেন একটু সেবার আশায়। তাই যতটুকু সম্ভব হয় সবাইকেই সাধ্য মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। গত প্রায় দেড় মাস ধরে সপ্তাহের অন্তত ৩ দিন আমাকে একাই এভাবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে সেবা দিয়ে যেতে হচ্ছে। ডা. ইউসুফ হোসেন আরও বলেন, তবে কিছু ডায়াগনস্টিকের নির্ধারতি দালালরা রোগী দেখার সময় ব্যাপক সমস্যা করেন। তাদের কারণেও অনেক সময় ভালোভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে হাসপাতালের যেসব স্টাফরা রয়েছেন তারাও তেমন ভালোভাবে কাজ করছেন না। এজন্যও রোগীদের সেবায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে মূল সমস্যা চিকিৎসকের অভাব। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসক পদায়ন না করলে কোনোভাবেই দীর্ঘদিন এভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব না। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো; এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে শিগগিরই যেন চিকিৎসক পদায়নের মাধ্যমে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শূন্য পদগুলো পূরণের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আলমগীর জানান, গত কয়েকদিন ধরে তার স্ত্রী অসুস্থ। তাকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে হাসপাতালের বহির্বিভাগে এসেছেন। রোগীর দীর্ঘ লাইন, চিকিৎসকও একজন। পরে কোনো রকমে বহু কষ্টে করে ডাক্তারকে দেখাতে পেরেছি। তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন ঠিকই, তবে এতো রোগীকে একজন ডাক্তার সেবা দিলে কেউই সঠিকভাবে সেবা গ্রহণ করতে পারেন না। তাই আমার দাবি; দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন এই হাসপাতালে আরও চিকিৎসক দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, আমরা বর্তমানে চিকিৎসকের মহাসংকটে ভুগছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত