ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি রংপুরে

দেশে বাল্যবিবাহের হার বেশি রংপুরে

২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ কন্যাশিশুর ১৮ বছরের পূর্বেই বাল্যবিবাহ হয়েছে। ২০২২ সালে এর হার ছিল ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দেশে ১৫ বছর কিংবা তার কম বয়সী কন্যাশিশুর বেলায় বাল্যবিবাহের এই হার ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিবাহের এই হার গ্রাম অঞ্চলে বেশি ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ। গতকাল দুপুরে রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে জয়েন্ট অ্যাকশন গ্রান্ট প্রজেক্টের আয়োজনে ‘বাল্যবিয়ের পরিণতি ও করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। মালালা ফান্ডের সহযোগিতায় পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (বিডিওএসএন) এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ধর্মীয় নেতা, কাজী, মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। এতে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনে বাল্যবিবাহের কারণ, নিরোধে করণীয় এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন পপি’র কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর কাজী আব্দুল্লাহ রিজভান। বাল্যবিবাহের কারণে শিশু মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে জানিয়ে তিনি জানান, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মোট গর্ভবর্তী নারীদের ২৫ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ থেকে ১৯ বছর। ইউনিসেফের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাল্যবিবাহে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ প্রথম এবং বিশ্বে অষ্টম।

পপি’র নির্বাহী পরিচালক আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সাঈদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক এপিপি অ্যাডভোকেট আফরোজা শারমিন কনা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ ও ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুলের চেয়ারম্যান সেরাফুল হোসেন হিমেল।

আলোচকরা জানান, দেশে বাল্যবিবাহের হার ৫০ ভাগ হলেও রংপুর বিভাগে ৬৮ ভাগ, যা দেশের জাতীয় গড়ের বেশি। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয় রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায়। রংপুরে ৫৩ দশমিক ৮ ভাগ আর লালমনিরহাটে ৫২ দশমিক ৬ ভাগ। এর মধ্যে বিভাগে ১৬ বছরের আগে বাল্যবিবাহের হার ৩৮ ভাগ, রংপুরে ২৫ ভাগ ও লালমনিরহাটে ১৯ দশমিক ৭ ভাগ। এর মধ্যে রংপুর শহরাঞ্চলে ৪০ ভাগ ও গ্রামাঞ্চলে ৫৬ ভাগ এবং লালমনিরহাটে এ হার সমান।

রংপুর বিভাগের এই দুই জেলায় বাল্যবিবাহ বেশি হওয়ার কারণ ও প্রভাব হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়, দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ সাংস্কৃতিকভাবে গৃহীত, কমিউনিটি ও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী যোগসূত্রের অভাব, ভৌগোলিক অবস্থান, নিরাপত্তাজনিত কারণ এবং সামাজিক সচেতনতার অভাব।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আরিফুল হক রুজুর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাগমা শিলভীয়া খান, গঙ্গাচড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আরিফ মাহফুজ, গঙ্গাচড়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আখতার, গঙ্গাচড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আফতাবুজ্জামান, গঙ্গাচড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেকুর রহমান, জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পেশ ইমাম মাওলানা মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কাজী হাফিজ মুহাম্মদ আব্দুল কাদির, মানবাধিকারকর্মী সামসে আরা বিলকিস, সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুক বক্তব্য দেন।

বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক সচেতনতার অভাবকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় রংপুর অঞ্চলে বাল্যবিবাহ কমছে না বলে মন্তব্য করেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে একজন শিশুর পেটে আরেকটি শিশু চলে আসে। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। অপুষ্টি, জরায়ু ক্যান্সার, শিশু মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত