চাকরির শুরুতে ১১তম বেতন গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। তবে সব বিদ্যালয়ে তা হয়নি। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি হয়েছে, আবার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত ছিল।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেখানে পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হলেও সরকারের উচ্চমহল বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবার কোথাও কোথাও শিক্ষা কর্মকর্তাদের বাধার কারণে শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালনে বাধার মুখে পড়েছেন।
আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো- প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি।
গতকাল রাজশাহী নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকেরা অফিসকক্ষে বসে দাপ্তরিক কাজ করেছেন। কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হয়নি।
একজন সহকারী শিক্ষক বললেন, প্রাথমিক শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের।
অবশ্য নগরের বিনোদপুরে অবস্থিত মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থী উপস্থিতি স্বাভাবিক। প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা জেসমিন জানান, বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। কেউ কর্মবিরতিতে নেই।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বৌলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক নূরুল ইয়াহিয়া শাহীন তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে বসে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দিনের মতোই বিদ্যালয়ে এসেছে। তারা যাতে শ্রেণিকক্ষে বসে হট্টগোল না করে, সে জন্য তাদের পাঠদানের কাজ দিয়ে রেখেছি। তিন দফা দাবিতে তারা আন্দোলনে আছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে যাতে কোনো রকম দাগ না কাটে, সে জন্য তাদের বিষয়টি বুঝতে দেওয়া হচ্ছে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, ধর্মপাশা উপজেলায় ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছেন ১৫টি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ডি এল লাহিড়ী সরকারি শহর পাঠশালা, সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয় ও শোলাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে সকাল থেকে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চলছে।
নড়াইলের বিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতির তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নড়াইল পৌরসভার শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভওয়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সদর উপজেলার নাকশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আউড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পংকবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
নাকশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের যে দাবি, সেটি অবশ্যই ন্যায্য দাবি। দাবির সঙ্গে তারা রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথাও চিন্তা করে তারা ক্লাস নিচ্ছেন।