মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর ৬১তম বার্ষিক ওরস শরিফ গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে শুরু হয় ওরস শরিফ। গতকাল বাদ ফজর থেকে মিলাদ শরিফ ও আলোচানা, এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় তিন দিনের আয়োজন।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পীর কেবলার এই ওরস শরিফের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.) ইসলামিক সেন্টারের প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মুফতি আশিকুর রহমান। আখেরি মোনাজাতের আগে হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (র.)-এর শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মময় জীবন দর্শন সম্পর্কে আলোচনা হয়।
আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে নলতা শরিফ এলাকা ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুইহাত তুলে মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। এসময় আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় মুসল্লিরা আকুতি জানান। কারো দুই চোখ ছিল মুদিত, কারো দৃষ্টি ছিল সুদূরে প্রসারিত। আর থরথর কম্পমান দুই ঠোঁটে মৃদুস্বরে উচ্চারিত হয়েছে আমিন আমিন ধ্বনি। আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে নলতা শরিফ। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন তারা। মোনাজাতে নলতা শরিফে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে। ফজরের নামাজের পরই নলতা শরিফসহ আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে। ফলে সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ সড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। আয়োজনের তিন দিনই ওরস শরিফে আগতদের মধ্যে ছিল আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক, সাহিত্যিক, সুফি-সাধক, পীরে কামেল, সুলতানুল আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গওছে জামান, আরেফ বিল্লাহ, হজরত শাহ্ছুফি আলহাজ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর স্মৃতি বিজড়িত সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা শরিফে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে ৬১ বছর ধরে এই ওরস শরিফ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওরসে আহ্ছানিয়া তরিকার ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আলেম ওলামা কোরআন হাদিসের আলোকে বক্তব্য রাখেন।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারিতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে তিন দিনব্যাপী ৬১তম বার্ষিক ওরস শরিফের সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে।