কক্সবাজার শহরে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক গুলি চালান আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আর এসব অস্ত্রাবাজি ও গোলাবারুদ সরবরাহের মূল নায়ক ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ক্যাডার বাহিনী। বিশেষ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রোস্তম আলী চৌধুরী ও আবু বক্কর ছিদ্দিক। এর মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে রামু থানা পুলিশের জালে ধরা পড়েন সেই অস্ত্রবাজ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক। আর ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে রিকশাচালক থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া রোস্তম আলী চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের অর্থে ওই সব অস্ত্র সরবরাহ দিতেন পূর্বাঞ্চলের ত্রাস বহু মামলার আসামি আলোচিত মো. শাহীন ওরফে শাহীন ডাকাত।
অনেকেই বলছেন, সাবেক সংসদ সদস্য কমল শাহীন ডাকাতের তত্ত্বাবধানে পাহাড়ি এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। এদিকে দীর্ঘদিন পর হলেও পুলিশের জালে কমলের ডানহাত খ্যাত বক্কর গ্রেপ্তার হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রামুসহ জেলবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দেয়। ছাত্র-জনতার প্রশংসায় ভাসছে রামু থানা পুলিশ। সচেতন মহলের দাবি, গ্রেপ্তারকৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বক্করকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে গণঅভ্যুত্থানে অস্ত্রবাজিসহ নানা অপকর্মের ঘটনা।
সূত্রমতে, কক্সবাজারে ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে কক্সবাজার শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়া হয়। আলোকিত বাংলাদেশের এই প্রতিবেদকের হাতে কয়েকটি ভিডিও এসেছে। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। অপর একটি ভিডিতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী মিছিল থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। ওই মিছিলের ভিডিওতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামনে-পেছনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরো কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলমেট পরিহিত কালো টি-শার্ট পরে ভারি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন আবু বক্কর ছিদ্দিক। তাদের অস্ত্রবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অস্ত্রবাজসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ ৬ মাসের অধিক সময় পার হলেও একজন অস্ত্রবাজকেও গ্রেপ্তার করতে না পারায় ছাত্র-জনতার মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের একাধিক মিছিল-মিটিং-এ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুস্তম আলী চৌধুরী ও আবু বক্কর ছিদ্দিক অধিকাংশ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করেন। তাদের অস্ত্রবাজি প্রত্যক্ষ করে ওই সময়ে সাবেক এমপি কমল তাদের প্রশংসা করেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাকাত শাহীন রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা এলাকার মোহাম্মদ ইসলামের ছেলে। শাহীনের বিরুদ্ধে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ৭টি ডাকাতি, ৩টি অস্ত্র, ১টি মাদক, ৪টি হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, শাহীন ডাকাত নিজেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স হিসেবেও জাহির করে থাকেন। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে অনেককে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন বলেও দাবি তাদের। বিভিন্ন ডাকাতপ্রবণ এলাকা থেকে ডাকাত সদস্যদের এনে বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে গরু, ইয়াবাসহ চোরাচালান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে তার বাহিনী।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশের যৌথ অভিযানে রামু গর্জনিয়া শিবাতলী পাহাড়ি এলাকার গোপন আস্তানা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আন্তঃউপজেলার শীর্ষ ডাকাত শাহিন উর রহমান প্রকাশ ডাকাত শাহিন। সে সময় প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়েন অপরাধে।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ রাতভর অভিযান চালায় পুরো উপজেলাজুড়ে। এসময় রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের ডানহাত খ্যাত আবু বক্কর ছিদ্দিক ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা প্রত্যয় বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসি ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, পুরো উপজেলাজুড়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। রামু থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের চারটি পৃথক টিম মাঠে কাজ করছে।
পুলিশ কর্মকর্তা ইমন আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক আত্মগোপন থেকে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘেœর পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কক্সবাজার শহরের লালদিঘি পাড়ে ছাত্র-জনতার উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণে ভূমিকা রাখেন। এবং ভারি অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, তাকে কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে এবং অস্ত্রবাজিসহ নানা অপরাধের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুরো উপজেলাজুড়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আরো বলেন, শাহীন একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশের টিম কাজ করছে। তবে পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় শাহীন ডাকাতকে ধরতে পুলিশের বেগ পেতে হচ্ছে।