ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হুথিদের হামলার জেরে লোহিত সাগর ছাড়ছে মার্কিন রণতরী

হুথিদের হামলার জেরে লোহিত সাগর ছাড়ছে মার্কিন রণতরী

ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার শিকার হয়ে মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান লোহিত সাগর ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইয়েমেনের আল-মাসিরাহ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, রণতরী এবং এর সঙ্গে থাকা জাহাজগুলো শিগগিরই ওই এলাকা ছেড়ে যেতে পারে। সূত্রটি বলেছে, ‘ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে ইউএসএস ট্রুম্যান সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে এবং মনে হচ্ছে, রণতরীটি যে কোনো মুহূর্তে লোহিত সাগর ত্যাগ করবে।’ এর আগে নিয়মিত হামলার অংশ হিসেবে সোমবারও এই মার্কিন রণতরীতে আঘাত হানেন হুথি যোদ্ধারা। এই হামলা ছিল অন্য হামলাগুলোর চেয়ে বড়। এতে নেভাল ইউনিট, ড্রোন ও মিসাইল ফোর্স সমন্বিতভাবে অংশ নেয়। বেশ কিছু ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়। হামলা থেকে রক্ষা পেতে বিপজ্জনক মোড় নেওয়ার সময় রণতরী থেকে একটি যুদ্ধবিমান সাগরে পড়ে ডুবে যায়। জাহাজটিকে তোলার চেষ্টা করা একটি ক্রেনও সাগরে পড়ে গেছে। এ ঘটনার পরপর লোহিত সাগরের উত্তর দিকে চলে যায় এই মার্কিন রণতরী।

ইসরায়েলি ঘাঁটিতে মিসাইল হামলার ভিডিও প্রকাশ : দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস মঙ্গলবার গাজাসিটির পূর্বে আল-তুফফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান করা একটি বাড়িতে গাইডেড মিসাইল দিয়ে আঘাত হানার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। প্রায় এক মিনিটের ভিডিওতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রস্তুতি পর্ব এবং বাড়ির ভেতরে অবস্থান করা সেনাদের ওপর নিবিড় নজরদারির দৃশ্য দেখানো হয়। এরপর সেনাদের লক্ষ্য করে একটি ১০৭ এমএম মিসাইল নিক্ষেপ করা হয় এবং মিসাইলটি নিখুঁতভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। যেদিন কুদসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীর ঘাঁটিতে আঘাত হানে, সেদিন একই এলাকায় ইয়াসিন শেল দিয়ে ইসরায়েলের একটি মারকাভা-ফোর ট্যাঙ্কে আঘাত হানেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডসের যোদ্ধারা। তাছাড়া, এদিন একটি অ্যান্টি-পার্সোনেল এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটানো হলে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা হতাহত হন। আল-মায়াদিনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস বোমাহামলা এবং অবরোধের পরও গাজার যোদ্ধারা তাদের মাতৃভূমি রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দখলদার বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম হয়েছে প্রতিরোধ গ্রুপগুলোর এই সমন্বিত লড়াই।

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের ৬০ দিন, হামাসের নিন্দা : গাজা উপত্যকায় দুই মাস ধরে চলা সর্বাত্মক ইসরায়েলি অবরোধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হামাস। তারা বলেছেন, অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবাধ্যতা। গাজায় অবরোধের ৬০তম দিনে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, খাদ্যের মজুত কমে গেছে; এর ওপর উপত্যকায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ চলছে। এতে দুর্ভিক্ষ তীব্রতর হচ্ছে। সংগঠনটি বিশ্বের সব দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে মানবতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘গাজার সাড়ে ২২ লাখের বেশি মানুষের ওপর আরোপিত অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য এবং বিশ্ববাসীর চোখের সামনে চলমান যুদ্ধাপরাধের অবসানে দখলদারদের ওপর সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আরব ও ইসলামি দেশ, তাদের জনগণ এবং বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের কাছে আমাদের জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়া, ত্রাণ সরবরাহ অবাধ করা এবং নিজস্ব ভূমিতে আমাদের জনগণের শান্তিপূর্ণ বসবাসকে নিশ্চিত করতে সব স্তর থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো উচিত।’

বাইডেন চেয়েছিলেন যুদ্ধ চলুক : গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কখনও যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেয়নি- এমনটাই জানিয়েছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। ইসরায়েলি চ্যানেল থার্টিনের এক বিস্ফোরক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাইডেন প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রাখতে ইসরায়েলকে নজিরবিহীনভাবে ছাড় দিয়েছে। এমনকি যখন আগ্রাসনের আর কোনো পরিষ্কার সামরিক লক্ষ্য অবশিষ্ট ছিল না, তখনও এই হামলায় সায় দিয়ে গেছে ওয়াশিংটন। ওয়াশিংটনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও গোপনে স্বীকার করেছেন, এই আগ্রাসন ছিল লক্ষ্যহীন; শুধু হত্যার জন্য হত্যা, ধ্বংসের জন্য ধ্বংস।

নয়জন বর্তমান ও সাবেক মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ভয়াবহ চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল হার্জগের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঈশ্বর ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি দয়া করেছেন যে, এই সময়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করেছি, কিন্তু কখনও মার্কিন প্রশাসন আমাদের বলেনি যে, এখন যুদ্ধবিরতি কর। কখনও বলেনি। এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে করার বিষয় নয়।’ চ্যানেল থার্টিনের ভাষ্য, এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুকে গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর জন্য পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইলান গোল্ডেনবার্গ বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ ছিল এক প্রকার নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংস, যেখানে কোনো কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্প প্রতিষ্ঠার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়নি।

প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও বাইডেন প্রশাসনের প্রকৃত অবস্থান ছিল ভিন্ন; তারা ইসরায়েলের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করতে চাননি। এমনকি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে ইসরায়েলকে বাঁচাতেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে বাইডেন প্রশাসন।’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দিবিনিময় আলোচনাও ভেস্তে দেন; কারণ এতে যুদ্ধবিরতির চাপ তৈরি হতো। মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, যুদ্ধ বন্ধের ভয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চিন্তা থেকেই নেতানিয়াহু আলোচনা ভেঙে দেন।

গাজায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত : অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মঙ্গলবার অন্তত ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা অন্তত ৫২ হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আহত আরও ১১৩ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে এক লাখ ১৭ হাজার ৯০৫ জনে দাঁড়িয়েছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজার মিডিয়া অফিসের আপডেট তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০’রও বেশি হবে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকাপড়া হাজার হাজার মানুষ আর বেঁচে নেই বলেই ধারণা করছেন তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত