ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শিগগিরই শুরু

বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শিগগিরই শুরু

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল। শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এক দশকের বেশি সময় ধরে আটকে থাকা ১৪ হাজার কোটি টাকার চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালের নির্মাণযাত্রা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় ২৩ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।

এরপরই ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগকারী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হবে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় তিনটি বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) এবং একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য ২০১৫ সালে কৌশলগত মহাপরিকল্পনা তৈরি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে বে-টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলা হয়। এ নিয়ে সমীক্ষাও করা হয়। তবে বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কিছু অবকাঠামোর প্রয়োজন হয়; তা নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়।

মূলত, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে পতেঙ্গা উপকূলে বে-টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছিল এক দশক আগেই। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ অর্থায়নসহ নানা জটিলতায় পুরো প্রকল্পই আটকে যায়। অবশেষে ২০ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প। এরমধ্যে ৬৫০ মার্কিন ডলার খরচ করে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণে গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সমস্ত প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সফলভাবে চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তির পর পরই ঠিকাদার নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা হিসেবে থাকবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। আর বাকি টাকার জোগান দেবে চট্টগ্রাম বন্দর নিজেই। এরমধ্যে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা খরচ হবে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণে। এছাড়া ১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকায় নেভিগেশন এক্সেস চ্যানেল তৈরি, ৫৭ কোটি টাকায় নেভিগেশন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। এর বাইরে রেল ও সড়ক সংযোগে খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান জানান, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে টার্মিনাল ভিত্তিক চুক্তি হবে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। পুরো বে-টার্মিনালের ব্যাপ্তি সাড়ে ৬ কিলোমিটার হলেও নির্মাণ হবে স্বতন্ত্র তিনটি টার্মিনাল। এরমধ্যে ১ হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে দু’টি টার্মিনাল নির্মাণ করবে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। দু’টি সংস্থা বিনিয়োগ করবে অন্তত ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বন্দরের নিয়ন্ত্রণে থাকবে ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে অন্য একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শফিকুল আলম জুয়েল জানান, একটি জাহাজ যখন বিনা বাধায় বে-টার্মিনালে আসবে, তখন বড় বড় মাদার ভ্যাসেলগুলোর মুভমেন্ট বেড়ে যাবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ ঢোকা কিংবা বের হওয়ার ক্ষেত্রে পুরোপরি জোয়ারের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বে-টার্মিনালের অবস্থান সাগর উপকূলে হওয়ায় ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ আসা-যাওয়া করতে পারবে। এছাড়া গভীরতার কারণে ১২ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রবেশের সুযোগ থাকবে বে টার্মিনালে। আর চট্টগ্রাম বন্দর যেখানে বছরে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করছে, সেখানে বে টার্মিনালে হবে ৫০ লাখ কনটেইনার। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম জানান, আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের চাহিদাকে মাথায় রেখেই টার্মিনালটিকে নির্মাণ করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০৩১ সালের জুন মাস নাগাদ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পটি উত্তর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় হবে। এই প্রকল্পের আওতায় সাগরের ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল সুবিধা তৈরি করা হবে। এছাড়া রেল, সড়কসহ যাবতীয় অবকাঠামো ও পরিষেবা সুবিধাও নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দেবে ১০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত