ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করার খবর অসত্য

৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করার খবর অসত্য

সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দিল্লিভিত্তিক সংগঠন রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপ (আরআরএজি) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করেছে বলে দাবি করেছে, যা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গতকাল বুধবার প্রেস উইং ফ্যাক্টসের এক পোস্টে এতথ্য জানানো হয়। গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নৃশংস ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থা উৎখাতের পর থেকে, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্ত বা তাদের সুবিধাভোগী বলে মনে করা অনেক সাংবাদিক বিভিন্ন মহল থেকে চাপের মুখে পড়েছেন। অনেকেই আওয়ামী লীগের শাসন আমলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা বিচারব্যবস্থার ত্রুটির কারণে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। এসব আইন এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।

প্রেস উইং জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাংবাদিকদের টার্গেট করেছে- এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, যিনি পূর্বে ঢাকায় এএফপি ব্যুরোপ্রধান ছিলেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকেই কয়েক দশক ধরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থানের জন্য পরিচিত ও স্বীকৃত। এতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, সুহাস চাকমার নেতৃত্বে রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপ (আরআরএজি) আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে প্রায়শই অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এমনকি ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কেও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সহিংসতা সম্পর্কে অসত্য দাবি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরআরএজি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল। সে সময় খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে তিনটি ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্বাসযোগ্য বাংলাদেশি গণমাধ্যম, অপরদিকে আরআরএজি ৯ জন নিহতের দাবি করেছে- স্বাধীন তদন্তে যার প্রমাণ মেলেনি। সুহাস চাকমা নিউজ ৯-এর একটি সাক্ষাৎকারে এই মিথ্যা দাবিটি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ‘ভারতীয় চাকমা নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন’ দাবি করে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দেন। বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের জন্য মানবাধিকার কংগ্রেস সংগঠনটি পরে আরআরএজি’র এই মিথ্যা দাবির ভিত্তিতে ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ বলে জানিয়েছিল, যা ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ফ্রম ফোর টু এ হান্ড্রেড’ এ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগপন্থি সাংবাদিক তাসমিয়া আহমেদ ডয়চে ভেলে সংবাদমাধ্যমে ওই মানবাধিকার সংগঠনের মিথ্যা দাবিকে উদ্ধৃত করে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে মানবাধিকার ক্ষুণেœর সমালোচনা করেন। কয়েক মাস আগেও এই সাংবাদিক তার লেখায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ২০২৫ সালের মার্চ, আরআরএজি জাতিসংঘের কাছে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে বলে অভিযোগ তোলে। এমনকি যেসব ফ্যাক্ট-চেকারা এই গ্রুপের তথ্য মিথ্যা প্রমাণ করে চ্যালেঞ্জ করেছিল, তাদের উপরও গ্রুপটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায়।

প্রেস উইং জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানায় এবং যে কোনো সহিংসতার ঘটনা সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের গুম-খুন-দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটিয়ে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশে পরিণত করতে কাজ করছে, যেখানে সব নাগরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার পরিবেশে বাস করতে পারবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত