গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে রাজধানীর কাঁচাবাজারে কিছুটা বেড়েছে সবজির দাম। বিশেষ করে শাকসবজি ও পচনশীল পণ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে ডিম ও মুরগির বাজারে ক্রেতারা পেয়েছেন স্বস্তির ছোঁয়া। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাউ, কুমড়া, করলা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটি, শসা, বেগুনসহ বেশ কিছু সবজির কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে মাঠ থেকে সবজি তুলতে দেরি হচ্ছে, আবার শহরে পরিবহনেও সমস্যা হচ্ছে। ফলে সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বাড়ছে। তবে ডিম ও মুরগির বাজারে ছিল স্থিতিশীলতা। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কম। বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহের দরের কাছাকাছি। তবে, বাজারে গরুর মাংসের চড়া দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা অনেক মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অনেকটাই নাগালের বাইরে।
ক্রেতারা বলছেন, সবজির দামে কিছুটা বাড়তি থাকলেও ডিম ও মুরগিতে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকায় খরচ কিছুটা সামলানো যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এক-দুই দিনের মধ্যেই সবজির সরবরাহ বাড়বে এবং দামও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাদের মতে, এ ধরনের অস্থায়ী মূল্যবৃদ্ধি মৌসুমি ব্যাপার। বৃষ্টির পানি নামলেই আবার আগের অবস্থা ফিরে আসবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরেও। ঝিঙা, বরবটি, ঢেঁড়শ, কাঁকরোল, করলা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, পটোল, চিচিঙা, ধুন্দল, লতির মতো সবজি। আকারভেদে প্রতি পিস লাউ ও জালি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। শসা (দেশি) ৫০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা ও টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। একইভাবে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতি কেজি কক মুরগি (সোনালি) বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। এদিকে মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে রুই বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে থেকে ৪০০ টাকায়, কাতল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, পাবদা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। তবে দেশি জাতের শিং ও কৈ যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী আড়তে বাজারে মুরগি কিনতে একজন বলেন, অনেক দিন ধরেই ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে ব্রয়লার মুরগি কিনছি। এখন ১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। জানি না কখন আবার দাম বেড়ে যায়। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে না পারলে সাধারণ জনগণের রক্ষা নাই।
সবজি বিক্রেতা সোলাইমান বলেন, সবজির দাম কমই ছিল। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাল কম এসেছে। তাই দাম একটু বাড়তি রয়েছে। আমরাও আগের থেকে বেশি দামে সবজি এনেছি।
এদিকে, ইরি বোরোর নতুন চাল আসার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে চালের দাম কিছুটা কমেছিল। তবে সে স্বস্তি বেশি দিন টিকল না। ঈদের পর এখন খুচরা বাজারে চালের দাম ফের বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, চালকল মালিকরা ঈদের পরে কারবার চাঙ্গা হওয়ায় সঙ্গে এই দাম বৃদ্ধি করেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৫ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে।
এদিকে ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে এ দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহ হলো অর্থাৎ ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চাল-ই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তায় ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, মিল মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম এখন বেড়েছে।