ইসরায়েল যেদিন ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে আসতে বাধ্য হয়, সেদিন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক প্রাণহানির খবর এসেছে। উপত্যকার খান ইউনিসে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অভিযানে ইসরায়েলের অন্তত আট সেনা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ সেনা। যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। গত মঙ্গলবার হামাস ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে অতর্কিত হামলা চালায় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম প্যালেস্টাইন ক্রনিকল।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে কয়েকজন সেনা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। খান ইউনিসের যে এলাকায় হামলা হয়েছে, সেখানে পরে ইসরায়েল তীব্র হামলা শুরু করে। মূলত আহতদের উদ্ধারে হামলার তীব্রতা বাড়ানো হয়। জানা গেছে, হামাসের সদস্যরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে এই অতর্কিত হামলা চালান। প্রথমে সেখানে থাকা সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। হতাহত সেনাদের উদ্ধারে আসা সেনাদের আরেকটি দলকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়। এতে ইসরায়েলি সেনাদের সামরিক যানগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এরমধ্যে একটি সাঁজোয়া যানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আহত সেনাদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে তেলআবিবের তেল হাসোমের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সূত্র। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, গত কয়েকদিন ধরে গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে আবারও নতুন উদ্যমে হামলা শুরু করেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা ইইউর : গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস জানিয়েছেন, যদি গাজার পরিস্থিতি না বদলায়, তবে আগামী মাসেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে ইউরোপীয় দেশগুলো। ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ কথা বলেন ক্যালাস। গত মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ক্যালাস বলেছেন, ‘গাজা ও পশ্চিম তীরে যা ঘটছে, তা স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও সহজ করা, তাদের কষ্ট কমানো।’ বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেছেন। এরইমধ্যে স্পেন এ চুক্তি সম্পূর্ণ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে মানুয়েল আলবারেস বলেছেন, ‘ইসরায়েল আমাদের বন্ধু হতে পারে; কিন্তু তাদের সঙ্গে শক্তভাবে কথা বলা দরকার। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং এজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’ তিনি ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বানও জানান। বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড ও সুইডেনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘ইইউ যদি দেরি করে অথবা সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সেটাও একটা বিপর্যয়। গাজায় প্রতিদিন মানুষ খাবার খুঁজতে গিয়ে নিহত হচ্ছেন। অনেকেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েই প্রাণ হারাচ্ছেন। প্রতিটি মুহূর্তের দেরি মানে আরও মৃত্যু।’ বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট ভুলে যাওয়া চলবে না। দুই বিষয় আলাদা।’ সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছন, ‘গাজায় মানুষ ভয়ঙ্কর অবস্থায় আছে। আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।’