উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাওয়া ছয়টি অগ্নিদগ্ধ লাশ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এর হিমঘরে সংরক্ষিত লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে চেহারা, শরীরের গঠন বা পোশাকের কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। এমন অবস্থায় একমাত্র ভরসা ডিএনএ পরীক্ষাই- যা এরইমধ্যে শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় স্বজনদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে। চিকিৎসক ও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লাশের অধিকাংশ অংশ দগ্ধ হয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চোখে দেখে লিঙ্গ নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিদগ্ধ লাশের সাধারণত আঙুলের ছাপ থাকে না এবং মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যায়। তবে দাঁত অনেক সময় আগুনে টিকে থাকে, কারণ দাঁতের বাইরের স্তরের এনামেল মানবদেহের সবচেয়ে শক্ত উপাদান। তাই দাঁতের ভেতরের পাল্প টিস্যু থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে শনাক্তকরণ সম্ভব। যদি দাঁতও নষ্ট হয়ে যায়, তবে লাশের হাড়ের অভ্যন্তরের অংশ বোনম্যারো থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের ডিআইজি মো. জামশের আলী জানান, এরইমধ্যে ১১টি অজ্ঞাত লাশের খণ্ড থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা সিআইডি ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে বিশ্লেষণাধীন। পাশাপাশি সম্ভাব্য ১১ জন নিখোঁজ ব্যক্তির পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকেও চুল, নখ ও গালের ভেতরের কোষের নমুনা নেওয়া হয়েছে।
ডিএনএ পরীক্ষায় কত সময় লাগবে জানতে চাইলে ডিআইজি জামশের বলেন, নমুনার মান ভালো হলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তবে কিছু নমুনা অতিরিক্ত পুড়ে যাওয়ায় কাজ কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিআইডি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কিছু স্বজন ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। নিখোঁজদের অন্য স্বজনদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, তারা যেন দ্রুত সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে গিয়ে নমুনা প্রদান করেন। এতে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া আরও দ্রুতসম্পন্ন করা যাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মমতাজ আরা বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিএনএ পরীক্ষা লাশ শনাক্তে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। বাংলাদেশেও এখন এ প্রযুক্তি রয়েছে এবং শতভাগ নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
বর্তমানে ছয়টি অজ্ঞাত লাশ সিএমএইচে সংরক্ষিত। সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী বা কর্মচারীদের লাশ রাখা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।