ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাকসুতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়

রাকসুতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন কেন্দ্র করে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পাসে একধরনের অস্থিরতা চলছে। ইতিমধ্যে চারবার তফসিল পুনর্বিন্যাস ও দুবার ভোট গ্রহণের সময় পরিবর্তন করেছে রাকসু নির্বাচন কমিশন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে ছাত্রসংগঠনগুলোর ‘আবদার’ পূরণ করতেই বাধ্য হয়ে নির্বাচন কমিশন বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে বলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের একাংশ মনে করছেন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থির থাকতে পারছে না। সাড়ে ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে নির্বাচনের তারিখ অপরিবর্তিত রেখে দুবার তফসিল পুনর্বিন্যাস এবং ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার নির্বাচনের সময় পরিবর্তন ও দুবার তফসিল পুনর্বিন্যাস করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম তফসিল অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে আগের দিন মধ্যরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ছাত্রনেতারা বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে ২০ আগস্ট বিকেলে রাকসুর নির্বাচনের সময় (১৫ সেপ্টেম্বর) অপরিবর্তিত রেখে নতুন করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তারিখ জানায় নির্বাচন কমিশন।

নতুন তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলার কথা ছিল ২৬ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে ২৬ আগস্ট ছাত্রসংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবির বিষয়ে দুপুরে নির্বাচন কমিশনের জরুরি সভা বসে। বেলা দুইটায় শুরু হওয়া এ সভা চলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোসহ তিনটি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কিছুটা সময় প্রয়োজন হওয়ায় নির্বাচনের তারিখ পেছানো হবে কি না, সেই আলোচনা অব্যাহত ছিল। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বাড়ানো ও নির্বাচন পেছানোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কেরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। পরে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি সভায় বসেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। সভা শেষে দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের নতুন সময় ঘোষণা করেন ২৮ সেপ্টেম্বর। তবে ঘোষিত ভোট গ্রহণের ওই দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী। এই দিনে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করায় সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীসহ ছাত্রনেতাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছাত্রশিবির, বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানান। সমালোচনার মুখে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আবার জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভোট গ্রহণের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয় আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর।

বারবার তারিখ পরিবর্তন: ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠেয় রাকসু নির্বাচন ঘিরে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। সেই সঙ্গে ছাত্রদল দুই মাস সময় চাওয়ার ‘অনুরোধ’সহ বেশ কিছু দাবি জানায়। দাবিগুলোর বিষয়ে ২৪ ও ২৫ আগস্ট ছাত্রনেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। এ বৈঠকের পর ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ও তফসিল দুবার পরিবর্তন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি ও ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। অন্যদিকে ১৬ আগস্ট ছাত্রদলের আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর দল পুনর্গঠন করতে মৌখিকভাবে নেতারা ও বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা নির্বাচন পেছানোর ‘অনুরোধ’ করেন। এ ছাড়া ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তি, প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট, যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজনসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেন ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি পূরণ ও সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই নির্বাচনের সময় দুবার পরিবর্তন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছিলাম। কিন্তু ছাত্রসংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটার তালিকায় ছবি সংযুক্তিসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সময় লাগবে। এ ছাড়া সনাতন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ২৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত