ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন কার্যক্রম চলমান থাকবে

জানালেন মেয়র শাহাদাত
জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন কার্যক্রম চলমান থাকবে

চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতা কমাতে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের চাক্তাই ডাইভার্শন খাল (বীরজাখাল-বৌবাজার) পরিষ্কার ও খনন কাজের উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল সোমবার এই কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র জলাবদ্ধতার সমস্যা, খালের দখল, পরিষ্কার কার্যক্রম এবং জনসচেতনতা বিষয়ে নাগরিকদের সহায়তা কামনা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, মেয়র হিসেবে আমার বর্তমানে মূল ফোকাস হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা হ্রাস করা, বিশেষ করে নীচ্ ুএলাকাগুলোতে। বীরজাখাল এখন আর খাল নেই, এটি যেন একটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। চারপাশে শুধু ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। খাল পরিষ্কার না করায় এর অস্তিত্ব প্রায় হারিয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে কোমর থেকে গলা পর্যন্ত পানি জমে যায়। এটি ভয়াবহ একটি অবস্থা। এলাকাবাসী জানতে চায়, কীভাবে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে নগরবাসী দ্রুত এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পায়। আমাদের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন করা এবং জনগণকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া। বিশেষ করে বাকলিয়া, চানগাঁও, মুরাদপুরসহ নিচু এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতার শিকার হয়। জোয়ারের পানি এবং বৃষ্টির পানি একসঙ্গে মিশে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেই সঙ্গে নোংরা পানির কারণে মশার উপদ্রবও বেড়ে যায়। এই খালটির সঙ্গে রাজাখালি খাল যুক্ত, যা সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশেছে।

ফলে এই খাল পরিষ্কার না হলে রাজাখালি খালের পানিও বাধাগ্রস্ত হবে এবং কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে ময়লা জমতে থাকবে। আমরা শুনে আসছি যে, অনেক বছর ধরে এখানে কোনো মেয়র বা জনপ্রতিনিধি আসেননি পরিস্কার করতে। আজকে এখানে এসে আমি যা দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে এটি কোনো খাল নয়, বরং একটি গার্বেজ স্টেশন। তাই আমরা এখন থেকে নিয়মিত পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করব। ইতোমধ্যে তিন-চার মাস ধরে আমাদের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলছে, এবং প্রতিটি খাল পরিষ্কারের আওতায় আনা হচ্ছে।

খাল দখল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এখানে একটি বড় সমস্যা হলো খালের জায়গা দখল হয়ে গেছে। খালের মধ্যেই কিছু বিল্ডিং নির্মিত হয়েছে, যা পানির স্বাভাবিক প্রবাহ আটকে দিচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই— জনগণের দুর্ভোগ কমানোর জন্য যদি খালের ওপর কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকে, তাহলে আমরা তা ভাঙতে বাধ্য হবো। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করা।

‘সিডিএর (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আওতায় যে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প চলছে, তা এ বছর শেষ হচ্ছে না। আগামী বছরের জুন-জুলাই নাগাদ এই প্রকল্প শেষ হবে। তার আগ পর্যন্ত আমাদের নালা ও খালগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা হলেও কমে।’ এলাকাবাসী পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে গাফিলতির অভিযোগ করলে মেয়র বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিদিন এখানে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা অপসারণের গাড়ি আসুক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুই মাসেও একবার গাড়ি আসে না, যা দুঃখজনক। তাই আমি পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছি, প্রতিদিন যেন গাড়ি এসে ময়লা সংগ্রহ করে।

‘আমরা চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালু করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ডোর-টু-ডোর ময়লা সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ একটি দল গঠন করা হবে। এতে করে জনগণ আরও বেশি সুবিধা পাবে। তবে শুধু পরিষ্কার করলেই হবে না, আমাদের জনগণের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমাদের অনেকের মনের মধ্যে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার সংস্কৃতি নেই। যত্রতত্র ময়লা ফেলার মানসিকতা থেকে আমাদের বের হতে হবে। জনগণের সুবিধার জন্য ডোর-টু-ডোর সেবাটা চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পলিথিন, প্লাস্টিক ও অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলার বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিন পানিতে পচে না, ফলে এগুলো জলাবদ্ধতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব বস্তু যথাযথভাবে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে।

আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী সংগঠন এবং মহল্লার সরদারদের সম্পৃক্ত করেছি, যাতে সবাই মিলে এ উদ্যোগের সফলতা নিশ্চিত করতে পারে। যেহেতু এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নেই, তাই এলাকাবাসীকেই উদ্যোগী হতে হবে। আমরা চাই সবাই একসঙ্গে কাজ করুক এবং এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখুক। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, উপ-প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা প্রণব শর্মা, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ)সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত