
ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। ঢাকার বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া মানুষদের জন্য এটা নতুন কোনো খবর নয়। গত কয়েক সপ্তাহের একাধিক পরিসংখ্যানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ঢাকার অবস্থান। তেমনি গতকালও বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৫ নগরের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল ঢাকা। গতকাল শুক্রবার আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ১১৯। বায়ুর এই মানকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার নিয়মিত বায়ুদূষণ পরিস্থিতি তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। আইকিউএয়ারের মানদ- অনুযায়ী, স্কোরশূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা ‘সহনীয়’ ধরা হয় বায়ুর মান। তবে স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ থাকলে তা ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়।
এ ছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে বায়ুর মান ১৫৭ নিয়ে বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসা। ১৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১৪৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল উগান্ডার কাম্পালা। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে ছিল যথাক্রমে কাতারের দোহা ও ভারতের দিল্লি। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৬ গুণ বেশি। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকা চীনের উহান বা ভারতের নয়াদিল্লিকে পেছনে ফেলে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পলিউশন স্টাডিজের ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখে গেছে, এ সময়ে ঢাকার গড় একিউআই স্কোর ছিল ২১৯। একটি শহরের গ্রহণযোগ্য একিউআই স্কোর ০-৫০ এবং এ ক্ষেত্রে ঢাকার স্কোর ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় বায়ুদূষণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ দূষণ হয় অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তা কাটা ও নির্মাণ কাজের কারণে।
এরপর ইটভাটা ও কলকারখানার ধোঁয়ায় ২৯ শতাংশ এবং যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে ১৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়েছে। কীভাবে আমরা নিজেদের এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় নিয়ে গেছি, তা কল্পনারও বাইরে। আরও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এই অবস্থাটা আমরা মেনে নিয়েছি। বছরের পর বছর ঢাকার একিউআই মানের অবনতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা বায়ুদূষণ রোধ এবং এর কারণগুলো বন্ধ করতে তেমন কিছুই করিনি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর শুধু ঢাকাতেই ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং সারা দেশে ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ মারা যায়।