
পথশিশুরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই, খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত বা রেলস্টেশনই তাদের আশ্রয়। তারা প্রায়শই মানুষের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন কাটায় এবং সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এর ফলে তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। একারণে পথশিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, ঢাকার ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই মাদকাসক্ত। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রধান কার্যালয়ে শিক্ষা সেক্টরের ড্রপ ইন সেন্টার এন্ড নাইট শেল্টার প্রকল্পের ‘পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের সুরক্ষা’ শীর্ষক সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)-এর জরিপ অনুযায়ী, ৩৭.৮% পথশিশু দারিদ্র্যের কারণে, ১৫.৪% বাবা-মায়ের শহরে আসার কারণে এবং ১২.১% কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়েছে। এদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে পথশিশুর সংখ্যা ৩৪ লাখ। এদের অর্ধেকই অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকায়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী গোলাম তৌসিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ-এর ডিআইজি ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. গোলাম রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ খলিল উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এ.এফ.এম গোলাম শরফুদ্দিন ও নির্বাহী পরিচালক সাজেদুল কাইয়ুম দুলাল।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন মিশনের শিক্ষা ও টিভিইটি সেক্টরের যুগ্ম পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। শিশু সুরক্ষায় ড্রপ-ইন সেন্টার এন্ড নাইট শেল্টার প্রকল্পের শিশু সুরক্ষা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কো-অর্ডিনেটর-মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন শেখ শফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, পথশিশুদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাল্যবিবাহ রোধ ও শিশু সুরক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে পথশিশুদের সুরক্ষাও বিবেচনায় নিতে হবে। ডিআইজি ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, পথশিশুদের উন্নতির জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে তা না হলে উন্নতি হবে না। বাংলাদেশের থানাগুলোতে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কোনো রুম নেই। শতকরা ৮% নারী পুলিশ দিয়ে চাইল্ড প্রোটেকশন সম্ভব নয়। নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। হটলাইন সংখ্যা বাড়াতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সমন্বয়ে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গোলাম রহমান বলেন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.)-এর আদর্শ নিয়ে কাজ করছে। রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পথশিশুদের নিয়ে আমরা কাজ করছি, এখানে অনেক খরচ হচ্ছে। সবাই সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা করব যেন পথশিশু সমাজ থেকে নির্মূল করতে পারি। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ খলিল উল্লাহ বলেন, পথশিশুদের নিয়ে যেসকল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারছে কি না, তা পরিবীক্ষণ করতে হবে। বক্তারা বলেন, পথশিশুদের দেশের সম্পদে পরিণত করা না গেলে তারা একসময় সমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রথমে তাদের সঠিক সংখ্যা, জন্মনিবন্ধন, সমস্যার কারণ এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এই কাজটি সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি সংস্থাগুলোর অংশীদারিত্বে সম্পন্ন করলে সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
উল্লেখ্য যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের জন্য পথশিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা শহরে দুটি ড্রপ-ইন সেন্টারের মাধ্যমে ৪০০ পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা, খাবার, স্বাস্থ্যসেবা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ডাম শিক্ষা সেক্টরের অধীনে পরিচালিত নাইট শেল্টার ১০ জন কিশোরী পথশিশুর ২৪/৭ সব সেবা প্রদান করছে।