
এবার ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করে আসা ওই সব কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে, ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের একাংশ কলেজ অক্ষুণ্ণ রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। দুটি কর্মসূচিই হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা বলছেন আগামী সোমবারের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে, না হলে বড় কর্মসূচিতে যাবেন তারা। আগের দিন গত বুধবার ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন করে কলেজগুলোর জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না করার দাবি জানান। তাদের আশঙ্কা, এই কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে। শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ কমে যাবে, শিক্ষকদের পদণ্ডপদবি নিয়েও জটিলতা দেখা দেবে। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারীশিক্ষার সুযোগও হুমকির মুখে পড়বে। এ জন্য শিক্ষকেরা বলছেন, সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়ার পরিবর্তে পৃথক ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো) স্থাপন করে কলেজগুলোকে এর অধিভুক্ত করা উচিত। যাতে বর্তমান ব্যবস্থা বহাল থাকে। নাম ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থাকলেও আপত্তি নেই। মূলত শিক্ষকদের এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা আজ ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে জমায়েত হন এবং সেখানে গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরেন। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা বয়কট করে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। অবশ্য, কিছু বিভাগে কিছু কিছু শিক্ষার্থী অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষকেরা।
সাত কলেজের বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ করতে কতক্ষণ সময় লাগবে সেটি আগামী সোমবারের মধ্যে অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে। তা না করলে বড় আকারে আন্দোলনে যাবেন। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে যেতে পারেন বলে শিক্ষার্থীরাই জানিয়েছেন। এর আগে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের একদল শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে ঢাকা কলেজ রাখার পক্ষে স্লোগান দেন।
ঢাকার এই সাতটি কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ২০১৭ সালে এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সরকারি সাত কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো প্রতিটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না।
সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে (অনুষদের মতো) বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এরমধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের জন্য সরকারি বাঙলা কলেজ এবং স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীর। এখন প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ত্রিমুখী অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকেরা বলছেন, কলেজগুলোকে কলেজিয়েট বা অধিভুক্তমূলক কাঠামোয় রূপান্তর করা যেতে পারে অথবা প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথক ক্যাম্পাসে স্থাপন করে এই সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা যেতে পারে। আর উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন।