প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য রোদণ্ডবৃষ্টির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তবে অতিবৃষ্টি যেমন মানববসতির জন্য বয়ে আনে নানা সংকট, তেমনি অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে মানুষ, পশুপাখি, বৃক্ষ ও তরুলতা সবকিছুই হাঁপিয়ে ওঠে। একচিলতে বৃষ্টির জন্য সৃষ্টি হয় তীব্র হাহাকার। এমন সংকটময় মুহূর্তে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। রোদণ্ডবৃষ্টির মালিক যিনি, তার কাছেই সমাধান চাইতে বলে। অনাবৃষ্টি ও তীব্র তাপপ্রবাহের সময় বেশি বেশি ইস্তিগফার করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি ক্ষমা করবেন। তোমাদের জন্য মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১১)।
বৃষ্টির নামাজের নিয়ম : বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যে নামাজ আদায় করা হয়, তাকে বলা হয় সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ। এ নামাজের নিয়ম হচ্ছে, খোলা ময়দানে আজান-ইকামতবিহীন প্রকাশ্য কেরাতে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবির দেবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচবার তাকবির দেবে। প্রতিটি তাকবিরের সময় হাত তুলবে। তাকবিরগুলোর মাঝখানে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা এবং মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়বে। নামাজের পর ইমাম খুতবা দেবেন। খুতবায় বেশি বেশি ইস্তিগফার ও কোরআন তেলাওয়াত করবেন। এরপর দু’হাত তুলে মিনতির সঙ্গে দোয়া করবেন। হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়বেন। (ফতোয়ায়ে শামি : ৩/৭২)।
কয়েকটি মুস্তাহাব : ১. যখন বৃষ্টি প্রার্থনার প্রয়োজন হবে, তখন ইমাম সাহেব তিনদিন রোজা রাখার এবং তওবা-ইস্তিগফার করার নির্দেশ দেবেন। তারপর চতুর্থ দিন বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়বেন। ২. বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়তে মুসল্লিরা পায়ে হেঁটে আসবেন।
৩. এ দিন নতুন কাপড়ের বদলে পুরনো বা ময়লা কিন্তু পবিত্র কাপড় পরবেন। ৪. আল্লাহর দিকে মনোযোগী এবং খুশুখুজু ও বিনয় প্রকাশ করবেন। অনুতপ্ত হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে রাখবেন। অহেতুক কথাবার্তা এবং হাসিঠাট্টা থেকে বিরত থাকবেন। ৫. প্রতিদিন নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে কিছু দান-সদকা করবেন। ৬. সবাই খাঁটি মনে তওবা করবেন এবং কারো ওপর অন্যের কোনো হক থাকলে তা আদায় করবেন। ৭. সব মুসলমানের জন্য ক্ষমা ও মাগফিরাতের দোয়া করবেন। ৮. নিজেদের মাঝে দুর্বল এবং বৃদ্ধ ও শিশুদের সবার আগে রাখবেন। তাদের দ্বারাও দোয়া করাবেন। ৯. ছোট শিশুদের মা থেকে আলাদা করে রাখবেন; যেন একটি আল্লাহভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ১০. চতুষ্পদ জন্তুও নিজের সঙ্গে ময়দানে নিয়ে আসবেন; যেন আল্লাহতায়ালার রহমত দ্রুত নেমে আসে। ১১. একদিন নামাজ দ্বারা বৃষ্টি না হলে লাগাতার তিনদিন নামাজ পড়বেন। ১২. বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য এ দোয়া পড়বেন, ‘আল্লাহুম্মাস কি না গাইসান মুগিসান মারিয়ান মারিআন গাদাকান তাবাকান আজিলান গাইরা রাইসিন নাফিআন গাইরা দা-ররিন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৮০৯১)।