ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বর্ষার শাপলা

তাবাসসুম মাহমুদ
বর্ষার শাপলা

শাপলা পুষ্প বৃক্ষ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভুক্ত সব উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এ ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। হাওড়-বিল ও দিঘিতে এটি বেশি ফোটে। এ উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে এ ফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ইত্যাদি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। এ ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এ ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধানখেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এ ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে এ উদ্ভিদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।

রূপ-আকৃতি : বাংলায় নীল শাপলা ফুলকে শালুক বা নীলকমল, লাল শাপলা ফুলকে রক্তকমল বলা হয়। চট্টগ্রামে এ ফুলকে অঁলাফুল বলা হয়। শাপলা ফুল ভোরবেলা ফোটে। দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কাণ্ড বা ডাটি বা পুষ্পদণ্ড পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এ মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে। পাতা পানির ওপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল ও সবুজ রঙের হয়। কিন্তু নিচের দিকে কালো রঙ। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। পাতার সাইজ ২০ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার। এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯ থেকে ১.৮ মিটার। শাপলা ফুল নানা রঙের দেখা যায়। যেমন- গোলাপি, সাদা, নীল, বেগুনি ইত্যাদি। এ ফুল ৪ থেকে ৫টি বৃতি থাকে। ১৩ থেকে ১৫টি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো দেখতে তারার মতো মনে হয়। কাপের সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রায় বছরের সব সময় শাপলা ফুটতে দেখা যায়। তবে বর্ষা ও শরৎ এ উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়।

প্রতীক : শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে। এ ফুল শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল। শ্রীলংকায় এ ফুল নীল মাহানেল নামে পরিচিত। শ্রীলংকায় বিভিন্ন পুকুর ও প্রাকৃতিক হ্রদে এ ফুল ফোটে। এ জলজ উদ্ভিদের ফুলের বিবরণ বেশ কিছু প্রাচীন বইয়ে নীলথপালা, নীলুফুল নামে পাওয়া যায়। যা শ্রেষ্ঠতা, শৃঙ্খলা, পবিত্রতার প্রতীক। শ্রীলংকার বুদ্ধদের দৃঢ় বিশ্বাস, গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮টি শুভচিহ্নের মাঝে একটি ছিল এ শাপলা ফুল।

ইতিহাস ও পুরাণ : শাপলার পরিবার বা গোত্র হলো নীমফায়েয়া। এটি গ্রিক শব্দের অনুবাদ। গ্রীক দার্শনিক পে¬টো ও এরিস্টটলের এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেন, এ উদ্ভিদ প্রায় ৩০০ খিষ্টপূর্ব পুরোনো। প্রাচীন গ্রীকে জল দেবীদের এ ফুল উৎসর্গ করে উপাসনা করার রীতি ছিল। প্রাচীন মিশরে হাজার বছর ধরে নীল শাপলা ফুল, সাদা শাপলা ফুলের প্রতি মানুষের অনুরাগ ছিল। মানুষ এ ফুল খেত, আঁকত ও শ্রদ্ধা করত। কথিত আছে, ভারতে হিন্দুদের সর্প দেবী মনসা পূজায় শাপলা ফুল দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত