ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা

খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাস পরপর খেলাপি ঋণের হিসাব দেয়। সেই অনুযায়ী চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণের এই হিসাব যথাযথ নয়; ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী হিসাব করলে দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণ এখন প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও খেলাপি ঋণের অঙ্ক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, গত সরকারের সময় লুকানো খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসায় ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে এর পরিমাণ তাদের হিসাবে সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা; যা ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ছয় মাস আগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। নয় মাস আগে অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এক বছর আগে জুন শেষে ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। নয় মাসে বেড়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বাইরেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে খেলাপি ঋণ দেখানো যাচ্ছে না আরও এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকের এক হাজার ৮৬ জন ঋণগ্রহীতার ২৭ হাজার ৩০২টি ঋণের বিপরীতে বিপুল অঙ্কের এসব অনাদায়ী ঋণ নিয়মিত দেখাতে হচ্ছে। এসব ঋণগ্রহীতা নিয়মিত গ্রাহকদের মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও বলেন, আদালতে মামলার কারণে আটকে থাকা ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ঋণও খেলাপি ঋণ। এটাকে কোনোভাবেই নিয়মিত ঋণ বলা যায় না। তিনি আরও বলেন, খেলাপিকে খেলাপিই বলা উচিত। কেউ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনলেও তাকে খেলাপি দেখানো উচিত। আর এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার এবং বিচার বিভাগকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তা না হলে আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনও ঋণ ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হয়। এক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি হলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন ঋণ নিতে পারে না। খেলাপি থাকা অবস্থায় আমদানি-রপ্তানির জন্য এলসি খুলতে পারে না। ঋণখেলাপি ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালকও থাকতে পারেন না। এমনকি কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। এজন্য যেকোনো ঋণ বিতরণের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) থেকে যাচাই করতে হয়। তবে অনেকেই উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নেওয়ার কারণে সিআইবিতে খেলাপি দেখানো হয় না। ফলে ঋণ পরিশোধ না করেও সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঋণখেলাপিদের ঢালাও আইনি সুরক্ষা বন্ধের জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন সংশোধনের মাধ্যমে আরও কঠোর বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন তারা। এজন্য বিভিন্ন ব্যাংকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে কী পরিমাণ ঋণ আটকে আছে এবং ব্যাংকের রিপোর্টে দেখানো হচ্ছে এমন খেলাপি ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত জুন মাস পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৯ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ১ হাজার ৮৬ জনের ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত