ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১১ ধারা-উপধারা সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
১১ ধারা-উপধারা সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি

উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশোধিত অধ্যাদেশে জারি করা হয়েছে। ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ১১টি ধারা ও উপধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত সোমবার রাতে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে ২১ আগস্ট সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ গঠন করা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ নিয়ে দুই মাসেরও বেশি সময় আন্দোলন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী দুই বিভাগের সচিব এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগে শুল্ক ও আবগারি এবং কর কর্মকর্তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খসড়া সংশোধিত অধ্যাদেশে নিয়োগ পদ্ধতি ও জনবল কাঠামো সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারা-উপধরায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন। এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে মূলত আন্দোলন শুরু হয়। তারা কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করেন। দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের দুই মাসের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরে সরকার পিছু হটে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে সংশোধনের আশ্বাস দেয়। এরপর থেমে আসে আন্দোলন।

অধ্যাদেশটি সংশোধনের জন্য উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

যা আছে সংশোধিত অধ্যাদেশে : ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ধারা-৪ এর উপ-ধারা (৩)- তে বলা হয়েছে, সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ করবেন।

সংশোধিত অধ্যাদেশে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকতাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেবে। ধারা-৪ এর উপ-ধারা (৪) এ রয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদসমূহ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে।

উপধারাটি সংশোধন করে করা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে এ বিষয়ে বলা হয়েছে- রাজস্ব নীতি বিভাগের আয়কর নীতি, দ্বৈতকর পরিহার চুক্তি, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মতামত, শুল্ক নীতি, মূল্য সংযোজন কর নীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কাস্টমস সংক্রান্ত চুক্তি অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য হবে। এছাড়া ধারা-৪ এর উপ-ধারা (৪ক) নামে একটি উপধারা যুক্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-রাজস্ব নীতি বিভাগের অন্যান্য অনুবিভাগের পদগুলো জনপ্রশাসন, অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, হিসাব ও নিরীক্ষা, তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা বা ব্যক্তিদের থেকে পূরণ করা হবে।

আগের অধ্যাদেশের এ ধারায় বলা হয়েছে- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন এবং মানবসম্পদ ব্যাবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন পদে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) ক্যাডার এ কর্মরত জনবলের মধ্য থেকে নিয়োগ করা হবে।

ধারা-৭ এর উপ-ধারা (৫) এ ছিল- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মরত কর্মচারীদের থেকে পূরণ করা হবে।

সংশোধিত অধ্যাদেশে এ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ ও জনপ্রশাসন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণ হবে।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের তফসিলে বর্ণিত আইনসমূহ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদসমূহ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তারা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে পূরণ হবে বলে আগের অধ্যাদেশের ধারা-৭ এর উপ-ধারা (৬)-তে উল্লেখ ছিল।

সংশোধিত অধ্যাদেশে এ বিষয়ে বলা হয়েছে- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের তফসিলের আইনসমূহ বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের পদসমূহ রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে পূরণ করা হবে।

ধারা-৮ এর দফা (জ) এ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্য পরিধিতে বলা ছিল- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদ্ধতি প্রণয়ন। সংশোধিত অধ্যাদেশে এ দফায় পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান, প্রজ্ঞাপন, রুলিং, নীতিমালা, স্থায়ী আদেশ ও অন্যান্য নির্দেশাবলী প্রণয়ন, সংশোধন ও এর ব্যাখ্যা প্রদান।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্তঃউইং এবং রাজস্ব নীতি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্বিক অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার কথা বিদ্যমান অধ্যাদেশের ধারা-৮ এর দফা (ট)-তে উল্লেখ ছিল। এখানে পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আন্তঃউইং ও রাজস্ব নীতি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠা।

সংশোধিত অধ্যাদেশের ধারা-৯-এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে এবং এভাবে ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত