মহান আল্লাহ পৃথিবীর এক ক্রান্তিলগ্নে মুহাম্মাদ (সা.)-কে পাঠিয়েছেন। তিনি উত্তম আদর্শের জনক। মানুষের জন্য তাঁর মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ ও জান্নাতি জীবন লাভের নির্দেশনা। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব : ২১)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব কালে, সব দেশে সব মানুষের জন্য সমান কার্যকর ও কল্যাণময়। অনেকে মনে করেন, বর্তমানের আধুনিক যুগে তথাকথিত সুশীল সমাজে তিনি কীভাবে আদর্শ হবেন? আমরা বলব, আপনারা নবীজির সিরাত এবং তার জীবনাচার মনোযোগের সঙ্গে পড়েন। সবকিছুই পেয়ে যাবেন। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত একজন মানুষের চাল-চলন ও উঠাবসা থেকে নিয়ে শুরু করে জীবনের সব দিক ও বিষয় তার মাঝে পাবেন। মানবতার সকল সমস্যার সমাধান তিনি দিয়ে গেছেন। আমাদের শুধু জানার অভাব। তার জীবনী যারা মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করেছে এবং তার আদর্শকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে লালন করেছে ও তাকে সফলতার মানদ- হিসেবে মেনেছে, তারাই সফলতার শীর্ষে আরোহণ করেছে।
স্বামী হিসেবে নবী (সা.) : নবীজি (সা.)-এর স্ত্রীরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের অন্যতম। তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণে গুণান্বিত হওয়ার কারণও নবী (সা.)। তারা নবীজির স্ত্রী হতে পেরে নিজেদের অনেক সৌভাগ্যশীলা মনে করতেন। তাদের কেউই কখনও নবীজির ব্যাপারে অভিযোগ দেননি। তিনি (সা.) স্বামী হিসেবে ছিলেন খুবই প্রেমময়ী। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সেখানে তাঁর মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতী ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনি সে স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতী ছিলাম।’ (নাসায়ি : ৭০)। বাবা হিসেবে নবীজি (সা.) : নবী (সা.) সন্তানদের সবাইকে এক চোখে দেখতেন। একরকম আদর-যত্ন করতেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তুলনায় পরিবার-পরিজনের প্রতি অধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী আর কাউকে দেখিনি। তার এক পুত্র (ইবরাহিম) মদিনার উপকণ্ঠে দুধ পান করতো। তার দুধমা ছিল কায়না। আমরা তার কাছে যেতাম। ...রাসুল (সা.) তাকে চুমু খেতেন এবং তার ঘ্রাণ নিতেন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৩৭৬)। ফাতেমা (রা.) ছিলেন নবী (সা.)-এর সবচেয়ে প্রিয়কন্যা। তার ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বলতেন, ফাতেমা আমার দেহের একটি অংশ। যাতে তার কষ্ট হয়, তাতে আমারও কষ্ট হয়।’ (নবীয়ে রহমত : ৪২৩)।
নানা হিসেবে নবী (সা.) : নবী (সা.) ছিলেন সব গুণে গুণান্বিত। তাঁর মধ্যে আদর, শাসন, হাসি ও আনন্দের গুণও বিদ্যমান ছিল। তিনি সবসময় গাম্ভীর্য হয়ে থাকতেন না। তিনি নাতিদের সঙ্গে অনেক হাসি-মজাক করতেন। কখনো কখনও তাদের সঙ্গে খেলাধুলায় করতেন। নাতি হাসান-হুসাইনকে তিনি অনেক ভালবাসতেন। ইয়ালা ইবনু মুররা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হুসাইন আমার এবং আমি হুসাইনের। হুসাইনকে যে ভালোবাসে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। আর হুসাইন হচ্ছে আমার দৌহিত্রদের মধ্যে একজন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৬৫)।
শিক্ষক হিসেবে নবী (সা.) : মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে পৃথিবীর মানুষের জন্য শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর মধ্যে শিক্ষকতার সকল গুণ বিদ্যমান ছিল। তিনি কখনও কোমল হতেন আবার কখনও শাসনও করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি ছাত্রদের সামনে বিনয়ী হতেন। তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকতেন। তা বুঝানোর জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি হচ্ছি তোমাদের সামনে ছেলের জন্য বাবার মতো। তাই আমি তোমাদের শেখাব।’ (তিরমিজি)। এখানে পিতার সঙ্গে শিক্ষকের তুলনা সম্মানের দিক থেকে তিনি করেননি; বরং করেছেন দয়া ও স্নেহের দিক থেকে।
শিশুদের সঙ্গে নবীজি (সা.) : নবী (সা.) শিশুদের আনন্দ দিতেন; কাঁধে চড়িয়ে তাদের আহ্লাদণ্ডআবদার পুরা করতেন। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, ‘একদিন আমরা মসজিদে বসা। নবীজি তাঁর মেয়ে জয়নব (রা.)-এর মেয়ে উমামাকে কাঁধে করে আমাদের সামনে এলেন। (তিনি বলেন), এরপর নামাজের ইমামতি শুরু করলেন। উমামা তখনও নবীজির কাঁধে। রুকু করার সময় তাকে নামিয়ে রাখেন। সিজদা থেকে উঠে আবার উঠিয়ে নেন। পুরো নামাজ তিনি এভাবেই আদায় করলেন।’ (বোখারি : ৫৯৯৬)।