ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শয়তানের মুক্তির গল্প

রাফি আহমেদ
শয়তানের মুক্তির গল্প

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে ফিতরার খাদ্যশস্য (যা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য জমা করা হয়েছিল) পাহারায় নিযুক্ত করলেন। গভীর রাতে এক আগন্তুক এলো এবং খাদ্যশস্য ওঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম ও বললাম, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমি একজন অভাবী লোক। আমার অনেক পোষ্য। আমি নিদারুণ কষ্টে আছি। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

ভোরে আমি রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা, তোমার হাতে গত রাতে যে ব্যক্তি বন্দি হয়েছিল, তুমি তার কী করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, বন্দিটি তার নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের কথা বলল। তাই আমি তার ওপর দয়া করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। আল্লাহর রাসুলের বলার কারণে আমি নিশ্চিত ছিলাম অবশ্যই সে আবার আসবে। আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। ঠিকই সে আবার এলো। দুই হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য ওঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, তুমি আমাকে এবারও ছেড়ে দাও। আমি বড্ড অভাবী মানুষ। আমার পোষ্যও অনেক। আমি আর আসব না। এবারও তার ওপর আমার দয়া হলো। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

ভোরে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, আবু হুরায়রা, তোমার বন্দীর খবর কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল, সে খুবই অভাবী। বহু পোষ্যের কথা বলল। তাই আমি তার প্রতি দয়া দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দিলাম। নবীজি (সা.) বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। আবারও যে আসবে।

আমি বুঝলাম, সে আবারও আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় থেকে আবারও তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আমি আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাবই। এটা তিনবারের শেষবার। তুমি ওয়াদা করেছিলে আর আসবে না। এরপরও তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও যদি আমাকে ছেড়ে দাও আমি তোমাকে একটি শেখাব, যে আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তুমি শোয়ার জন্য বিছানায় গেলে আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষী থাকবে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান ঘেঁষতে পারবে না।

আমলের কথা বলায় এবারও তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। ভোরে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, তোমার বন্দির কী হলো? আমি বললাম, সে বলল, সে আমাকে এমন আমল শেখাবে যা দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন। নবি (সা.) বললেন, এবার সে সত্য কথা বলেছে অথচ সে মিথ্যুক। তুমি কি জান, তুমি এ তিন রাত কার সঙ্গে কথা বলেছ? আমি বললাম, আমি জানি না, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে ছিল একটা শয়তান। (বোখারি : ২৩১১)।

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতুও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়া মা ফিল আরজি। মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহি তুনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ, ওয়া সিআ কুরসিইয়ুহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরজি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিউয়ুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ : আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তাঁক তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না ও নিদ্রাও নয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সবকিছু তাঁরই। কে আছে এমন যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাঁদের সামনে কী আছে ও পিছনে কী আছে সবই তিনি জানেন এবং তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করেছে এবং সেগুলো সংরক্ষণ করতে তাঁর কষ্ট হয় না। এবং তিনিই সর্বোচ্চ ও মহান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত