ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঋতুপর্ণাদের ফেবারিট মানছে প্রতিপক্ষ

ঋতুপর্ণাদের ফেবারিট মানছে প্রতিপক্ষ

মাত্র কয়েক দিন আগেই ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথমবার এএফসি এশিয়ান কাপের মঞ্চে পা রেখেছে লাল সবুজের ফুটবল কন্যারা। মিয়ানমারে সফল অভিযান শেষে এবার দক্ষিণ এশিয়ার বয়সভিত্তিক ফুটবলে লড়াইয়ে নামছে ঋতুপর্ণারা। মাত্র চার দল নিয়ে হবে এবারের নারী সাফ। অংশ নেবে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। আজ বসুন্ধরা কিং অ্যারেনায় উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বয়সভিত্তিক দলের দায়িত্বে কোচ পিটার বাটলার। এই টুর্নামেন্ট নিয়েও দারুণ আশাবাদী তিনি।

বাটলার বলেন, ‘এই মেয়েরা সবাই দায়িত্ববান। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে দুর্দান্ত খেলেছে।

তাদেরই বেশিরভাগ এখানে খেলবে। ৭ জন ফুটবলার এই দলে খেলার যোগ্য। মেয়েরা প্রস্তুত। গত কিছু দিন ওরা দারুণ অনুশীলন করেছেন। আশা করি এখানে আমরা ভালো কিছুই উপহার দিব। পিটার বাটলারের কাছে এই টুর্নামেন্ট নতুন ঋতুপর্ণা খোঁজার মঞ্চ। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে সাধারণত জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের খুব একটা দেখা যায় না। সেখানে বাংলাদেশ দলে খেলবেন সদ্য জাতীয় দলে খেলা ৭ জন খেলোয়াড়। এরমধ্যে রয়েছেন খোদ অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও। তাই এই টুর্নামেন্ট নতুনদের যাচাই করার সুযোগ খুব একটা থাকছে না। তবে কোচ বাটলার বললেন ভিন্ন কথা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই ধরনের টুর্নামেন্টগুলো দারুণ। আফ্রিকাতেও আমি এই ধরনের টুর্নামেন্ট খেলেছি কোসাফা। যা অনেকটা সাফের মতোই। আগেও বলেছি এই টুর্নামেন্টগুলো নিজের নাম তৈরি করার সুযোগ দেয়। এখান থেকেই আপনি পরবর্তী ঋতুপর্ণা চাকমা ও মনিকা চাকমা পাবেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ফুটবলের বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা খুবই মূল্যবান।

খেলোয়াড়েরা এখানে আত্মবিশ্বাস ও ম্যাচ টাইম পায় যা জাতীয় দলে পায় না। যেমনটা আগেও বলেছি তরুণদের খেলানোর ঝুঁকির ব্যাপারে কোচ হিসেবে আপনি কতটা সাহসী সেটার ওপর নির্ভর করছে সবকিছু,’ যোগ করেন এই ইংলিশ কোচ। তবে ঠিক কাকে পরবর্তী ঋতুপর্ণার মতো দেখছেন তা উল্লেখ করেননি এই কোচ, ‘আমি নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। আমাদের দলে সত্যিই বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। যারা কি না উন্নতির যাত্রা শুরু করেছে। আমি নিশ্চিত নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাও একই পরিস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তারা আসলে এখানে উন্নতি করতে এসেছে।’ এই আসরে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে তরুণ খেলোয়াড়দের বিকাশকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন বাটলার, ‘যেকোনো মূল্যে জিততে হবে আমি এমনটা বিশ্বাস করি না।

আমি বিশ্বাস করি এবং আমি নিশ্চিত, এখানে থাকা অন্য কোচরাও একমত হবেন, এই টুর্নামেন্ট তরুণ খেলোয়াড়দের বিকাশ এবং তাদের গেমটাইম দেওয়ার জন্য। যেন তারা পরবর্তীতে সিনিয়র জাতীয় দলে খেলার পথে এগিয়ে যেতে পারে।’ জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় থাকলেও এই আসরে নতুনদের ভালো সুযোগ দিবেন তার ইঙ্গিত দিয়ে এই কোচ আরও বলেন, ‘আমার চোখে খেলোয়াড় গড়ে তোলার জন্য এটি দারুণ একটি টুর্নামেন্ট, তরুণ খেলোয়াড়দের জাত চেনানোর দারুণ এক সুযোগ। তাই আমি মুখিয়ে আছি তারা কী করতে পারে এটা দেখতে।’ তবে কাজটা যে কঠিন তাও জানান তিনি, ‘এই রুমে থাকা সব কোচই বলবে মাঝেমধ্যে তরুণদের খেলানোর ঝুঁকি নিতে যথেষ্ট সাহসী হতে হয়। এটা সহজ কাজ নয়। তবে যেমন আমি বলেছি, সব দলের জন্য খেলোয়াড় গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ একটি টুর্নামেন্ট। ভবিষ্যতের তারকাদের তৈরি করার একটি দারুণ সুযোগ।’

নিয়মের কারণে অনেক খেলোয়াড়কে দলে নিতে পারেননি সেটাও জানালেন বাটলার, ‘আপনারা জানেন একটা নিয়ম আছে, অনূর্ধ্ব-১৭র খেলোয়াড় অনূর্ধ্ব-২০ দলে খেলতে পারবে না, কিন্তু জাতীয় দলে খেলতে পারে। কেন সেই নিয়ম আমার মাথায় আসে না, কিন্তু এইটাই মানতে হবে। অন্য অনেক দেশের মতো আমরা চেষ্টা করছি একটি পাইপলাইন তৈরি করার। যাতে করে খেলোয়াড়েরা তাদের জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।’

আজ থেকে শুরু হচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলের এই আসর। চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত। বাংলাদেশ ছাড়া এই আসরে খেলবে নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা। ডাবল রাউন্ড লিগ পদ্ধতিতে হবে এই আসর। যেখানে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। কিংস অ্যারেনাতে চারজাতির টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নিচ্ছে- নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা। সবাই সবার সঙ্গে দুটি করে ম্যাচ খেলবে। ছয় ম্যাচ শেষে যারা পয়েন্টের শীর্ষে থাকবে তারাই পাবে ট্রফি। সাফের সিনিয়র আসরে টানা দু’বার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক আসরেও ট্রফি কম নয়। তার ওপর এবার প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। এমন অর্জনের পর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে অন্য চোখে দেখছে সবাই। শুরু হতে যাওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী তিন দেশের সবার কণ্ঠেই ছিল স্বাগতিকদের নিয়ে সমীহ।

সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের কোচ থানকা মায়া বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়ায় অভিনন্দন জানান। ভুটানে নারী ফুটবল লিগ চলছে। ঢাকায় আসা দলে থাকা প্রত্যেক ফুটবলারই লিগে খেলছেন। দলটির অধিনায়ক শেদু তেশরিং বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মারিয়া মান্ডার সঙ্গে আমার খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে খুব ভালো গতিশীল খেলোয়াড়। আমরা এখানে নিজেদের খেলাটা খেলতে চাই।’ ভুটানের মতো শ্রীলঙ্কাও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। কোচ শ্রীনাথা কুমারা সরাসরি বাংলাদেশকে এই টুর্নামেন্টের ফেভারিট ও শিরোপার দাবিদার হিসেবে বলেছেন। তাই প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলবে বলে জানালেন কোচ শ্রীনাথা, ‘সত্যিকার অর্থে আমাদের বাংলাদেশের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক খেলার সামর্থ্য নেই। আমাদের দলের অনেক খেলোয়াড় অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সি। অভিজ্ঞতার জন্যই আমাদের এই টুর্নামেন্টে আসা।’ নেপাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দুর্দান্ত লড়াই করেছে। টাইব্রেকারে তারা হেরে যাওয়ায় মূল পর্বে খেলতে পারেনি। নেপাল সিনিয়র দলে খেলা কাউকে অনূর্ধ্ব-২০ স্কোয়াডে রাখেনি। নেপালের কোচ প্রসাদ গুরুং বলেছেন, ‘আমাদের এই দলে সিনিয়র দলের কেউ নেই। এখান থেকে খেলে খেলোয়াড়রা প্রস্তুত হয়ে জাতীয় দলে যাবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পরিষ্কার ফেভারিট।’ এই টুর্নামেন্টে ভারত না থাকায় বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে মূলত শিরোপার জন্য লড়াই হবে। নেপাল মাস দেড়েকের প্রস্তুতি নিলেও শিরোপায় দৃষ্টি কোচ প্রসাদ গুরুংয়ের, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। বাংলাদেশ অবশ্যই কঠিন প্রতিপক্ষ, এরপরও আমরা আশাবাদী। এবার ঘাসের মাঠে খেলা হচ্ছে, বিগত সময়ে বাংলাদেশে টার্ফে (কমলাপুর স্টেডিয়াম) হয়েছিল।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত